চট্টগ্রামে অবৈধ পলিথিনের ছড়াছড়ি ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়


১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ৩:২১ : অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ ফোরকান চট্টগ্রাম:: এক যুগ আগে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও কিন্তু চট্টগ্রাম যেন এর বাইরে। যেখানে সেখানে এখনো পলিথিনের ছড়াছড়ি, থেমে নেই উৎপাদন। বায়েজিদ, বাকলিয়া, হালিশহর, অক্সিজেন, চাকতাই, কালুরঘাট, কারখানাগুলোতে দেদারচ্ছে তৈরি হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধের পরও সিটি করপোরেশনের সনদ ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চট্টগ্রামে চলছে পলিথিন উৎপাদনের মহৎসব। অথচ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ওই দুই সংস্থার অনুমতি নিয়েই চলছে কিছু কারখানা।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি করে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। এসব বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা। বায়েজিদ টেক্সটাইল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শামিমা প্যাক জোন লি: নামে এম.এ. মান্নানের ফ্যাক্টরীতে পলিথিনের ব্যাগ-প্যাকেট তৈরিতে ব্যস্ত সেখানকার শ্রমিকরা। একই চিত্র দেখা গেছে বাকলীয়া এলাকায় ১৮ নং ওয়ার্ডের সামনে রহিম ও সুজনের ফ্যাক্টরীতে। বাস টার্মিনাল ও বায়েজিদে জামালের ফেক্টরীতে ও একই অবস্থা। এছাড়া চট্টগ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পলিথিন উৎপাদন কারখানা। নিষিদ্ধ জেনেও কাজ করাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বলুয়ারদিঘী,চাকতাই,খাতুনগঞ্জে, জেলরোড,আর রিয়াজউদ্দীন বাজারে চলে এর রমরমা বিক্রি। তৈরি ও বাজারজাতের সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট রয়েছে সেখানে। খোলামেলাভাবেও বিক্রি থেমে নেই প্রতিটি এলাকা জুড়ে। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু রাজধানীর পরেই চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৯৫ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। পলিথিনের এ চাহিদা মেটাচ্ছে চট্টগ্রামের, বাকলিয়া,অক্সিজেন, চাকতাই, হালিশহর, বায়েজিদ, বাস টার্মিনাল,আগ্রাবাদ, কালুরঘাট বেসিক এলাকায় গড়ে ওঠা প্রায় শতাধিক অবৈধ পলিথিন তৈরির কারখানা।

স্থানীয় থানা পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের লোকদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে নিষিদ্ধ এ পলিথিন তৈরির পর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর প্রশাসনের সামনেই চলছে এসব অবৈধ কারবার। চট্টগ্রাম শহরে অবৈধ কারখানাগুলোর সিংহভাগই গড়ে উঠেছে জরাজীর্ণ আবাসিক ভবন কিংবা বাসাবাড়িতে। এসব চলছে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগে। ফলে সরকার এ দুটি খাত থেকেও প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

এদিকে ব্যবহারের পর পলিথিন যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়ায় উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি। ড্রেনে-নর্দমায় পড়ে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পুরো চট্টগ্রাম। অভিযোগে জানা গেছে, প্রতিটি অবৈধ কারখানা থেকে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা মাসে পেয়ে থাকে ৪০-৪৫ হাজার টাকা এবং অসাধু পুলিশও একই ভাবে মাসোহারা পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ। এদিকে কোরবানীগঞ্জ বলুয়ারদিঘী ঘিরে রয়েছে ২০/৩০টি অবৈধ পলিথিন দানার কারখানা।

সম্প্রতি এই এলাকার খাজা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, যমুনা প্লাস্টিক, সুজন প্লাস্টিক, তালুকদার প্লাস্টিক, আরাফাত এন্টারপ্রাইজ, খাজা প্লাস্টিক কারখানা ও আকতার প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিকে জরিমানা করা হয়। এসব কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ অভিযানে আরও ৯টি কারখানাকে সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো দেলোয়ার প্লাস্টিক, মিজান প্লাস্টিক, ফারুক প্লাস্টিক, মহসিন প্লাস্টিক, নিজাম প্লাস্টিক ও নামবিহীন আরও চারটি কারখানাসহ মোট ৯টি কারখানা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক সকালেরসময় ডট কমকে জানান, চট্টগ্রাম শহরে কিছু এলাকায় পলিথিনের কারখানা চালু আছে এবং কিছু বন্ধ আছে। এগুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছি, কিন্তু তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা আইন অমান্য করে পলিথিন তৈরি করছে। আর যেগুলো চালু আছে সেগুলো সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে বলে তিনি জানান। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান জানান, শুধু বিদেশে রপ্তানিকারক পলিথিন কারখানা মালিকদের অনুমোদন আছে। অনেকে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের মধ্যে অবৈধভাবে পলিথিন বাজারজাত করছেন। তবে অবৈধ পলিথিন কারখানা চালু থাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কখনই দায় এড়াতে পারে না।

এদিকে অপর এক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর নাছিরাবাদ শিল্প এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এক পলিথিন কারখানা। পরিবেশ অধিদপ্তর খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায়। হাতেনাতে পলিথিন তৈরির প্রমান পাওয়ার পর গত কাল ১০সেপ্টেম্বর কারখানাটির মালিক এম.এ মান্নানকে নোটিশ দিয়ে অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। তথ্যটি জানান, চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক। এভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারী আইন অমান্য করে গড়ে উঠেছে শত শত পলিথিন কারখানা। যা দেশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে বলে বিজ্ঞ মহল অভিযোগে জানান।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ