প্রাইভেটকারে ছাত্রী গণধর্ষণ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত অন্যতম ধর্ষক সাহাবউদ্দিন


৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ৩:০১ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: কৌশলে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে মাদরাসার এক ছাত্রীকে কীভাবে গণধর্ষণ করেছে তার একটি বিবরণ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। চট্টগ্রাম মহানগর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহসীন মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ বিবরণ দেন। সোমবার গভীর রাতে কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গিবাজার মেরিনার্স রোডে কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর ধরা পড়া ধর্ষক শ্যামল দে’র স্বীকারোক্তিতে এ ঘটনার বিবরণ দেন ওসি মোহাম্মদ মহসিন। এই বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অন্যতম ধর্ষক মো. সাহাবুদ্দিন (২৩)।

ওসি জানান, নিহত সাহাবুদ্দিন কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার মৌলভীপাড়া মধ্যম কৈয়য়ার বিলের শামসুন্নাহার এর বাড়ির মৃত মফজল মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার শ্যামল দে (৩০) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া উপজেলার কালী পাহাড় পশ্চিম খুরুশিয়া এলাকার মৃত হরি কুমার দে’র ছেলে। ওসি জানান, গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ের পশ্চিম পাশের পিডিবি আবাসিক কোয়ার্টারের সামনে এক ছাত্রীর পাশে এসে দাঁড়ায় একটি প্রাইভেট কার। গাড়িতে চালক হিসেবে ছিল শ্যামল, আরোহী ছিল সাহাবুদ্দিন।

একপর্যায়ে ভিকটিমকে রিমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে প্রশ্ন করেন সাহাবুদ্দিন। হাতে দেখিয়ে দিলে তারা চিনবে না বলে পুনরায় প্রশ্ন করে রীমা কমিউনিটি সেন্টার কোনদিকে। তখন ভিকটিম মুখে বললে উভয়ে ভিকটিমকে বারবার অনুরোধ করে একটু দেখিয়ে দেয়ার জন্য। এ সময় গাড়ির পাশে যাওয়া মাত্র পিছনে বসে থাকা সাহাবুদ্দিন দরজা খুলে দ্রুত টান দিয়ে ওই ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে দরজা বন্ধ করে দেয়।

এরপর গাড়িটি সার্সন রোডের দিকে চলতে থাকে। সাহাবুদ্দিন ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পর্যায়ক্রমে ড্রাইভিং সিটে থাকা শ্যামল দে পিছনে এসে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। সাহাবুদ্দিন গাড়ি চালানো অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। এরপর জড়িত দুজন মিলে ভিকটিমকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়। এরপর কাউকে কিছু না বলার কথা বলে ভিকটিমকে গণি বেকারির মোড়ে বেলা পৌনে ১২টার দিকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।

নামিয়ে দেয়ার আগে ভিকটিমের মোবাইল থেকে ডায়াল করে আসামিরা ভিকটিমের মোবাইল নম্বর নিয়ে নেয়। এবং সাহাবুদ্দিন বলে আমি ফোন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি তুমি না আস তাহলে তোমার ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিব। এই কথা বলে হুমকি দেয়। ভিকটিম লোকলজ্জায় অপহরণ ও ধর্ষণের বিষয়টি পরিবারের সবার কাছে গোপন রাখে। আসামি সাহাবুদ্দিন তার ফোন থেকে সোমবার সকাল থেকে পুনরায় ভিকটিমকে ফোন দিয়ে আসার জন্য বলে, না এলে ভিডিও নেটে ছেড়ে দেবে বলে ধমক দিতে থাকে।

ভিকটিম একপর্যায়ে উপায়ন্তর না দেখে তার ভাইকে বিষয়টি জানায়। তার ভাই বিস্তারিত শোনার পর সোমবার বিকালে কোতোয়ালি থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়। এরপর তাৎক্ষণিক কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল আসামিদেরকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। আসামি সাহাবুদ্দিনের কথামত ভিকটিম দিদার মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয়। কোতোয়ালি থানা পুলিশও দিদার মার্কেট এলাকায় অবস্থান করে।

আসামি সাহাবুদ্দিন, শ্যামল ও অপর এক আসামি সাহাবুদ্দিনসহ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ভিকটিমকে দ্রুত গাড়িতে তুলে নেয়। পুলিশ গাড়িটির পিছু নিয়ে ধাওয়া করে। প্রাইভেটকারটি প্যারেড কর্নারের পূর্ব পাশ, কেয়ারি মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, জামালখান হয়ে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। সামনে থাকা টহল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকে।

একপর্যায়ে কোতোয়ালি থানাধীন লালদীঘির পাড়স্থ জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশের বেরিকেডের মাঝে পড়ে যায়। গাড়িটি পুলিশের বেরিকেডের মধ্যে পড়ে যাওয়ার বিষয় বুঝতে পেরে আসামিরা দ্রুতবেগে গাড়ি থেকে নেমে কোলাহল পূর্ণ পৌর জহুর হকার্স মার্কেটের ভিতরে ঢুকে যায়।পুলিশ পিছু ধাওয়া করলেও জহুর হকার্স মার্কেটের ভিতরে প্রচুর লোক সমাগম থাকায় আসামিরা দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশ জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার (চট্টমেট্টো-গ-১৩-৪১৫১) জব্দ করে।

ওসি মহসীন বলেন, এরপর প্রাইভেটকারের সূত্র ধরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামল দে কে ডিসি রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত আরেকটি প্রাইভেটকার (চট্টমেট্টো-গ-১২-৩০৫২) জব্দ করে। শ্যামলের তথ্য অনুযায়ী ফিশারিঘাট মেরিনার্স রোডে পুলিশ গেলে সাহাবুদ্দিন তার সহযোগীরা সহ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পুলিশও নিজেদের রক্ষায় গুলিবর্ষণ শুরু করে। একপর্যায়ে উক্ত এলাকা তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাহাবুদ্দিনকে পাওয়া যায়। সেখানে থাকা ১টি ওয়ান শুটার গান, ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান, এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল ফারহান আহমেদ রাসেল আহত হয়। গুলিবিদ্ধ সাহাবুদ্দিনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তার মানিব্যাগে থাকা ভোটার আইডি কার্ড থেকে তার পরিচয় পাওয়া যায় বলে জানান ওসি মো. মহসীন। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম শহরের চালকদের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা তাদের গাড়ির মালিকের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পৌঁছিয়ে দেয়ার পর মাঝের সময়ে ২-৩ জন চালক এক হয়ে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় ওঁৎ পেতে থাকে।

একজন চালক গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে থাকে। অপর একজন চালক কিশোরী বয়সের কোনো মেয়ে একা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে মেয়েটির গতিপথ যেদিকে সেদিকের কাছাকাছি কোনো স্থানের ঠিকানা জানতে চায়। মেয়েটি কাছাকাছি এলে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে প্রাইভেটকারে গণধর্ষণ করে। এমন আরো কয়েকটি ধর্ষণের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ