বিষয় :

একদিনেই রাজপথ কেড়ে নিলো ২২ প্রাণ!


২৯ মার্চ, ২০১৯ ১০:২৫ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মা মেয়ে নাতিসহ আটজন নিহত হয়েছেন। মাদারীপুরে ব্রিজের রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে সাতজন নিহত ও সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত হন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে আরো ছয়জন নিহত হন।

চট্টগ্রাম (লোহাগাড়া) সংবাদদাতা জানান: উপজেলার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের সাথে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে মা-মেয়ে-নাতিসহ একই পরিবারের তিনজন। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের জাঙ্গালিয়ায় রিলাক্স প্রিমিয়ামের একটি বিলাসবহুল চেয়ার কোচের সাথে চট্টগ্রামমুখী মাইক্রো বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই জায়গায় রাস্তা কিছুটা ঢালু। কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এসপি নজরুল ইসলাম বলেন, মাইক্রো বাসের চালক কিছুটা ঘুম ঘুম ভাব অথবা নেশাগ্রস্ত ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া লস্করপাড়া এলাকার হজেরা বেগম (২৬), চুনতি খলিফার পাড়া এলাকার আবু তাহের (২২), কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর ছনখোলা নয়াপাড়া এলাকার মো: জিসানের স্ত্রী তসলিমা আক্তার (২০), তার শিশু মেয়ে সাদিয়া (২), তসলিমা আক্তারের মা হাসিনা মমতাজ (৪৫), চকরিয়ার খুটাখালীর উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বান্ডু মিয়ার ছেলে মো: নুরুল হুদা (২৫), চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সিকদারপাড়া এলাকার মো: সিরাজুল ইসলামের ছেলে আফজাল হোসেন সোহেল (৩০) ও বাঁশখালীর শেখেরখীল এলাকার মো: সিদ্দিকের ছেলে মো: সায়েম (২২)।

নিহতদের লাশ চমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশের ধারণা মাইক্রোবাসের চালকও ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছেন। জানা যায়, কক্সবাজারমুখী রিলাক্স পরিবহনের বাসের (চট্ট মেট্রো-১১-১১৯৬) সাথে চট্টগ্রামমুখী মাইক্রোবাসের (চট্ট মেট্রো-১১-৩৭৩৪) এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের ৮ যাত্রী মারা যান।

মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান: সদর উপজেলার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কলাবাড়ি এলাকায় গতকাল সকালে মাহফিলের যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৪৫ জন যাত্রী। নিহতরা হলেন, হাবি হাওলাদার (৫০), আব্বাস খান (৩২), হাসিয়া বেগম (৫৫), হাসান (১৪), আক্কাস (৪০), নয়ন (২৭), সায়েম (২৫)। তাদের সবার বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ভাঙ্গাব্রিজ, পান্তাপাড়া, খৈয়ারভাঙ্গা এলাকায়।

অপর দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম বাবনাতলায় গতকাল দুপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নাঈম বেপারী (২৫) নিহত হন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য মঙ্গলবার বাড়ি থেকে চন্দ্রপাড়া যায় মুসল্লিরা। সকালে মাহফিল শেষে চন্দ্রপাড়া থেকে মাদারীপুর সদরের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় সুবিন-নবীন নামে একটি লোকালা বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন মুসল্লিরা।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে সাইট দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায় বাসটি। এ সময় ঘটনাস্থলে চারজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরো তিনজন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় পঁয়তাল্লিশ জন যাত্রী।

খবর পেয়ে মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হলেও এর সংখ্যা বাড়তে পারে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম বাবনাতলা নামক স্থানে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নাঈম বেপারী (২৫) মারা যায়। নাঈম মাদারীপুর শহরের বাগেরপাড় এলাকার ইব্রাহিম বেপারীর ছেলে এবং মাদারীপুর বিকাশের এসআর ছিল।

যশোর অফিস জানায়: যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও নারী-শিশুসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। সকালে শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের পাশে ও যশোর-খুলনা সড়কের চাউলিয়ায় ট্রাক ও থ্রি হুইলারের সংঘর্ষে অজ্ঞাত (৪০) এক ব্যক্তি ও এক যুবক (২২) নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় পাঁচ শিশু, দুই নারীসহ আহত হন ১৫ জন।

দুর্ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মী ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে অভয়নগর উপজেলার সাকিবকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার্থে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্য ঘটনায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শঙ্করপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে বাইসাইকেল আরোহী আলেক সরকারকে (৫৫) একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে চাপা দেয়।

এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তিনি যশোর সদরের রামনগর এলাকার এরশাদ আলীর ছেলে। সকালে বাড়ি থেকে শহরের দিকে আসছিলেন তিনি। যশোর কোতোয়ালি থানার ইনসপেক্টর সমীর সরকার জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাস ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ডিস ব্যবসায়ী নিহত ও পুলিশ সদস্যসহ তিনজন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল সকালে উপজেলার বরগুনা-চান্দখালী-সুবিদখালী-বাকেরগঞ্জ মহাসড়কের রানীপুর নামক স্থানে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মজিদবাড়িয়া গ্রামের বাড়ি থেকে আবদুল লতিফ খান (৫৫) মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরস্থ সুবিদখালী যাওয়ার পথে বরগুনা-চান্দখালী-সুবিদখালী-বাকেরগঞ্জ মহাসড়কের রানীপুর নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই আ: লতিফ খাঁন নিহত হন।

এ সময় স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য মো: রাজু সিকদার (২৮), মো: নেওয়াজ সিকদার (২৫) ও কার্তিক সিকদারকে (৪০) উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

নিহত আ: লতিফ খাঁন আয়লা-হাবিব বাজার এলাকায় ডিসের ব্যবসায় করতেন এবং উপজেলার কুদবারচর গ্রামের মো: গফুর খানের ছেলে। মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো: মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আলম মিয়া (৪৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরো একজন। গত বুধবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ভাদুরিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে এবং ভাদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আলম মিয়া ভাদুরিয়া বাজারের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বায়োজিত আহম্মেদ কাবা নামে ভাদুরিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, নিহত আলম মিয়া ওই রাস্তা হয়ে হেঁটে বাজারের দিকে আসছিলেন। এ সময় বিরামপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জগামী একটি বাস পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হন।

রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান: জেলার বাঘাইছড়ির সাজেকের মাচালং যাওয়ার পথে সাজেকে একটি জিপ উল্টে এক শ্রমিক নিহত এবং পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত শ্রমিকের নাম জিয়া মাঝি (৪৫)। তিনি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা।

আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল দুপুরে সাজেক সড়কের এগোজ্যাছড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা জানান, সাজেক থানার নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজের জন্য ৩৫ জন শ্রমিক হাটহাজারী থেকে দু’টি জিপগাড়িতে করে মাচালং যাচ্ছিলেন। তার মধ্যে একটি জিপগাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা ও অন্য শ্রমিকেরা তাদের উদ্ধার করে বাঘাইহাট জোনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতরা হলেন- উজ্জ্বল মিয়া (১৬), জহির (১৭), হুমায়ুন(১৭), রিয়ান (২৬) ও মো: আলী (২৩)।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ