রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল 

সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিতে রেল ঠিকাদারের অভিনব প্রতারণা!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৩ আগস্ট, ২০২২ ৪:০৬ : অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন প্লাটফর্মের ১ ২ ও ৩ প্রকল্পের কাজ ভাগিয়ে নিতে চট্টগ্রামের মেসার্স তাসনিম এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি টেন্ডারে অংশ নিয়ে ভুয়া কাগজ পত্র সৃজন করেছে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, সিই (পূর্ব) ই-জিপি (৬৪৭২৯৪) নম্বর টেন্ডারে মেসার্স তাসনিম এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা সনদ প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১২৭ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে মহাপরিচালক এর কার্যালয় সংগ্রহ থেকে পূর্ব রেলের জিএম ও প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

জানা যায়, মেসার্স তাসনিম এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশন প্লাটফর্মের কাজের জন্য দরপত্র জমা দেয়, দরপত্র অনুযায়ী কাজ ভাগিয়ে নিতে বিভিন্ন তদবিরও করে। কিন্তু সে কাজের কাগজপত্র ভুয়া। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে। জাকির হোসেনের এই জাল-জালিয়াতির বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে গত ২৬ জুলাই নোটিশের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ঠিকাদার জাকির হোসেন তাসনিম এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ হাতিয়ে নিতে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদপত্র যুক্ত করেছে, ভুয়া প্রশংসাপত্র জুড়ে দিয়েছে, ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টির সাথে ভঙ্গ করেছে চুক্তির মৌলিক শর্তও। এমনকি পূর্ব রেলের ২ জন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ম্যানেস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান একাধিক সূত্র।

এবিষয়ে ঠিকাদার জাকির হোসেনের সাথে তার মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।

বিষয়টি নিয়ে দুদকের এক কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করা হলে তিনি সকালের-সময়’কে বলেন, দেশে দরপত্র প্রতারণা নিয়ে এ ধরনের জাল-জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন নয়। বস্তুত উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ দেয়া পর্যন্ত নানা ধরনের কারসাজি করে কিছু ঠিকাদার।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঠিকাদারিতে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেখা গেছে সেখানেও ঢুকে পড়েছে জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি।

তিনি আরও বলেন, প্রকৃত পক্ষে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করে না, ভঙ্গ করে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারদের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার করতে রেলের বহু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করা প্রয়োজন। শাস্তি হিসেবে এদেরকে কাজ দেয়া যাবে না। কিন্তু জালিয়াতির পরও কিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন ঠিকাদার জাকির হোসেন তা বোধগম্য নয়।

রেল সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব ভুয়া ঠিকাদারদের শুধু কাজ থেকে দূরে রাখাটাই যথেষ্ট নয়, তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা দরকার। আর এ ধরনের জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন।

তারা আরও বলেন, বড় বড় কাজ পাবার জন্য কোনো কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা রকম অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বস্তুত ঠিকাদারি খাত অনিয়ম দুর্নীতির একটি বড় জায়গা। এ খাত থেকে জালিয়াতি নির্মূল করতে পারলে দেশের সার্বিক দুর্নীতি অনেকটাই দূরীভূত হবে। এজন্য কালো তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানই যাতে ভবিষ্যতে কাজ না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে পূর্ব রেলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, ঠিকাদার জাকির হোসেন ভুয়া কাগজ পত্র দিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিতে চেয়েছেন। জাল-জালিয়াতির জন্য থাকে শোকজ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। তার জবাবের পর আমরা খোজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

প্রসঙ্গ, মেসার্স তাজনীম এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন, ৪৮৫ ডি.টি রোড পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এই ঠিকানায় বিভিন্ন সময় রেলের দরপত্রে ভুয়া সনদ দিয়ে প্রতারণা করত বলে জানা যায়, তিনি ডি.টি রোড, পাহাড়তলী মন্সি বাড়ীর আদু মিয়ার ছেলে।

সকালের-সময়/এমএফ/আরএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ