রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ তিনি!


সকালের-সময়  ৯ এপ্রিল, ২০২২ ১:৩৬ : অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিঃস্ব অবস্থায় চাকরিতে ঢুকলেও বর্তমানে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জানআলী হাটের স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভুঁইয়া। তিনি এখন তার এলাকাবাসী ও জানআলী হাট স্টেশন এলাকার বিস্ময়।

অভিযোগ রয়েছে, স্টেশন এলাকায় বিভিন্ন রকম ভয় ভিতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে রেলের জায়গায় অবৈধ বস্তি ও স্থায়ী/অস্থায়ী দোকান বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। অনিয়ম আর দুর্নীতির টাকা দিয়ে তিনি তার গ্রামের বাড়ি মীরসরাই ও চট্টগ্রাম শহরে কিনেছে জমি। রয়েছে তার স্ত্রী ও নিকট আত্নীয় স্বজনের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স।

জানা যায়, জানআলী হাট স্টেশন এলাকায় আবদুস সালাম ভুঁইয়ার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। যে-ই তার বিরুদ্ধে যাবে, তাকেই মামলা হামলা দিয়ে সর্বস্বান্ত করার হুমকি দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নেমে আসে নির্যাতন।

সূত্র জানায়–কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর প্রদান, বেডিং সরঞ্জাম ঘাটতি, ভুয়া ভাউচারে সরকারি অর্থ লোপাট, প্লাটফর্মে মাদক দ্রব্য অবাধে বিক্রিসহ অনিয়ম আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে জানআলী হাট রেলওয়ে স্টেশন।

সরেজমিনে দেখা যায়– আবদুস সালাম ভুঁইয়ার ক্ষমতার দাপটে প্রতিদিন রেল লাইনের উপর বসানো হচ্ছে কাঁচা বাজার। আবার সে বাজার থেকে তোলা হয় মোটা অংকের চাঁদা। তার নির্দেশে হরহামেশাই রেল লাইনের উপরে কাঁচাবাজারের দোকান বসায় ব্যবসায়ীরা। এ চিত্র যেন প্রতিদিনের। এ বিষয়ে কোন সু-নজর নেই ঊর্ধ্বতন রেল কর্মকর্তাদের!

দেখা যায়–জানআলী হাট স্টেশন এলাকায় আনুমানিক ৪০/৫০টির মত দোকান রয়েছে। তিনি এসব দোকান থেকে প্রথমে অগ্রিম বাবদ হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। পরে দৈনিক, সাপ্তাহিক, ও মাসিক ভাড়া নেন তিনি। যা থেকে এই টাকার ভাগ পায় সাবেক আই ডাব্লিউ ষোলশহর ফারুক ও আকবর আলী মজুমদার। তারা প্রমোশন পেয়ে অন্যত্র চলে গেলেও এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন দোকানপাট ও বস্তিঘর, এখান থেকেও তারাও হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

বিষয়টি নিয়ে ষোলশহরের সাবেক আই ডাব্লিউ মো. ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তিনি অসুস্থ বলে লাইন কেটে দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়–কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে জান আলী হাট স্টেশনের দিকে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি অবৈধ টিন শেডের ঘর ও দোকান। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য অনুসারে স্টেশন মাস্টার আবদুস সালামকে প্রতি ঘর ও দোকান বাবদ প্রতি মাসে দিতে হয় এক থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি রেল লাইনের পাশে পুকুরের সাথে গড়েছেন এক বিশাল বস্তি যেখানে ৭০ থেকে ৮০ টি অবৈধ ঘর রয়েছে। প্রতি ঘর থেকেও ২ থেকে ৬ হাজার টাকা করে মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া নেন এই সালাম ভুঁইয়া।

এ বিষয়ে জানার জন্য জানআলী হাট স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভুইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন–এই সব অবৈধ দখল শুধু আমি একা করিনি, আমার কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এর পিছনে জড়িত। সিনিয়র স্যারদের মাসে মাসে সম্মানি দিতে হয়। আমি একা খেতে পারি না। পরে আবার আমি কিছু দখল করিনি বলে লাইন কেটে দেন।

আরও অভিযোগ আছে–কাপ্তাই রাস্তার মাথায় গেট ঘরের সামনে এককালীন কিছু দোকান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন এই স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভুঁইয়া। নানান অপকর্মে জড়িত সালাম ভুঁইয়া দুই বছর আগে জানআলী হাট স্টেশনে যোগদান করার পর থেকে ট্রেন সিগন্যাল রেজিস্টারে (টিএসআর) অন ডিউটি অফ ডিউটি বিষয়ে কোনো স্বাক্ষর নেই বলেও তথ্য দিয়েছেন তার সহকর্মীরা।

এ বিষয়ে জানার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ও রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের বর্তমান (ভারপ্রাপ্ত) ডিটিও আনসার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা উভয়ে কল রিসিভ করেনি।

স্টেশন এলাকায় আবদুস সালাম ভুঁইয়ার আধিপত্য ও রমরমা অবৈধ বাণিজ্যের আরো খবর দ্বিতীয় পর্বে দেখুন।

এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ