জিম্মি পূর্ব রেল-ডিসিও অফিসের জাকিরের পদে পদে মাস্তানি!


সকালের-সময়  ১৬ মার্চ, ২০২২ ৭:৪৬ : অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জমি দখল বাণিজ্য, বিদুৎ, গ্যাস, পানির চোরা লাইন দিয়ে ভাড়া আদায়, সরকারি চাকরির বিধিমালা উপেক্ষা করে নিজের স্ত্রী, শ্যালক ও সন্তানের নামে লাইসেন্স করে নিজেই ঠিকাদারি করা এবং অন্যান্য ঠিকাদারদের জিম্মি করে কমিশন আদায় করাসহ বড় অনিয়ম-দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কায়দায় দখল বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে পূর্ব রেলের পাহাড়তলী ডিসিও অফিসের স্টোর শাখার প্রধান সহকারী (বড়বাবু) জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এসব অনিয়ম নিয়ে লিখিত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন–রেলে অনিয়মের ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হুমকির মুখে পড়বে সেবামুলক এই প্রতিষ্ঠানটি। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় রেলের বৃহৎ স্বার্থে তার (জাকির হোসেন) বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ কালাম চৌধুরীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়–পাহাড়তলী ডিসিও অফিসের স্টোর শাখার প্রধান সহকারী জাকির হোসেন সরকারি কর্মচারী হয়েও প্রচলিত বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে রেলওয়ে তথা দেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলছেন। বরাদ্দকৃত বাসার পাশে রেলের মালিকানাধীন খালি জায়গায় নিজের খেয়াল-খুশিমতো ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। যেখানে সরকারি বাসা থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন দিয়ে ভাড়া আদায় করছেন। ‍এর ফলে প্রতি মাসে সরকারের বড় অংকের রাজস্ব গচ্ছা যাচ্ছে। গত বছরের প্রথম দিকে তার অবৈধ দখল করা বাসাগুলো উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা আর হয়নি।

রেল সূত্র জানায়–একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে জাকির চাকরিবিধি অমান্য করে নামে-বেনামে ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর ঠিকাদার। তার এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেলে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বাজারমূল্যের কয়েকগুণ টাকা।

তার ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মেসার্স আই জেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আফফান ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এম এম এন্টারপ্রাইজ এবং এস এ কর্পোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মালিকের স্থলে স্ত্রী শারমিন, শ্যালক সরোয়ার আলম এবং নিকটাত্মীয়দের নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে অফিসের কাজ ফাঁকি দিয়ে তিনিই এসব পরিচালনা করে থাকেন।

উল্লেখ্য–এস এ কর্পোরেশনের প্রকৃত মালিক মো. শাহ আলম নামে এক ব্যবসায়ী হলেও সে ওই তথ্য গোপন করে সকলের চোখকে ফাঁকি দিতে ওই নামেই তার শ্যালক সরোয়ার আলমের নামে আরেকটি লাইসেন্স করে চরম অন্যায় করেছেন। তার মতো এমন কতিপয় অসৎ কর্মচারীর এসব অপকর্মের ফলে প্রতি বছর বৃদ্ধি পায় রেলের ভর্তুকির পরিমাণ। পক্ষান্তরে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে তাদের পকেট ভারি করে থাকেন।

শুধু তাই নয়, কেনা কাটার গুরুত্বপুর্ণ কিছু কাজ তার হাত দিয়ে হয় বলে বিভিন্ন ঠিকাদারদের সুবিধা প্রদানের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিশন আর এসব কমিশন আদায়ের ক্ষেত্রে ‍ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নামও ব্যবহার করছেন। আর কেউ কমিশন দিতে না চাইলে নানাভাবে হয়রানিও করেন তাদের।

এমনকি তিনি বিভিন্ন লোকের কাছে বলে বেড়ান যে ওই চেয়ারটি/পদটি নাকি ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে থাকেন। তিনি দেদারসে অপকর্ম চালালেও তার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি কোন কর্মকর্তার। প্রথম প্রথম ডিসিও আনসার আলী প্রতিবাদ করলেও তাকে ভয় দেখিয়ে মাসোয়ারার বিনিময়ে সেইও চুপ হয়ে যায়।

আরো জানা যায়–কদমতলী পোড়া মসজিদ সংলগ্ন ফেমাস টেইলার্স ও এনায়েত বাজারেরর ভিক্টোরিয়া টেইলার্সের সাথে আতাঁত করে টিটি, টিসি, গার্ড, পোর্টার ও বুকিং সহকারীদের পোশাকের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ হাজার টাকায় নিম্নমানের পোশাক সরবরাহ করে থাকেন এমনকি অনেককে কৌশলে ১ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করে থাকেন।

এসব অপকর্ম করে সে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখনই তার লাগাম টেনে না ধরলে রেলকে বড় রকমের ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্বিক বিষয় তদন্তপূর্বক রেলের কালো বিড়ালদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে রেলের ভর্তুকি কমানো ও ‍ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মান-সম্মান রক্ষা পাবে বলেও মনে করছেন তারা।

এ ব্য‍াপারে জানতে জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

আর এদিকে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (পূর্ব) মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ও ফোন রিসিভ করেনি।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ