নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আয়া হিসেবে যোগদান করেন বিবি আয়েশা। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে হয়ে যান এই এমএলএসএস (পিয়ন)। এরপর এমএলএসএস থেকে অফিস সহকারি পদে পদোন্নতি নেন। পরবর্তীতে উচ্চমান সহকারি পদে পদোন্নতি নেন কয়েক দিন যেতে না যেতেই। আবার উচ্চমান সহকারী পদে তার শিক্ষানবিস টাইম পূরণ হওয়ার আগেই (ফিডার পোস্ট) প্রধান সহকারী বনে যান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে।
অভিযোগের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় একটি পদ থেকে অন্য পদে যাওয়ার জন্য যে সময়টুকু শিক্ষানবিস সময় ধরা হয় তা বিবি আয়েশার সকল পদোন্নতিতে সঠিক ভাবে মানা হয়নি। রেলওয়ের প্রাচীনতম নিয়ম ভেঙ্গে অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দ্রুত বনে যান প্রধান সহকারী (বড়বাবু) যা দেখে অবাক রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়–রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় মেডিকেল অফিস (ডিএমও)’র দপ্তর বরাবরে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের এন্যুয়েল প্রসিউর প্ল্যান (ইপিপি)’তে হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- অর্থ বছর শেষে হাসপাতালটি ঘুরে চোখ শূলের মতই লেগেছে পূর্বের সেই জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে।
আরো জানা যায়–এই অর্থবছরের সংশোধিত এপিপিতে হাসপাতালটির ডিএমও দপ্তরের অধীনে ২ টি কম্পিউটার থাকলেও মেরামত দেখানো হয়েছে ৮টির! নতুন ভ্যানগাড়ির টাকায় পুরাতন ভ্যানগাড়ি কেনা হয়েছে। প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। ২টি কম্পিউটার সরবরাহের বিল পরিশোধ হলেও সরবরাহকৃত কম্পিউটার ১টি যা এক প্রকার হরিলুটের সামিল। এছাড়াও হাসপাতালে কম্পিউটার, ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মীদের পোশাক, দা, কোদাল, ভ্যানগাড়ি কেনা-কাটায় উঠেছে বিবি আয়েশার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
এমনকি দুর্নীতির কারণে বিবি আয়েশা ও তার সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাদ যায়নি ঝাড়ু-ঝাটাও, বালিশ, মশারি, বিছনার চাদর, পর্দাসহ এসব সরবরাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং চাহিদা থাকলেও তা কেনা হয়নি রহস্যজনকভাবে! এতে ও তারা লোপাট করেছে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা।
বিবি আয়েশার অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় পর গত ১১ এপ্রিল ২০২১ ইং তারিখে ডিএমও/চট্টগ্রাম ডাঃ চিন্ময় বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শাস্তিস্বরূপ “ফ্রম এ” ইস্যু করেন। এরপর ডাঃ চিন্ময় বিশ্বাস বিবি আয়েশার কাছ থেকে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডাক্তারের সাথে অশালীন আচরণ করেন এবং তাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলে তিনি ” ফরম এ ” মধ্যে উল্লেখ করেন।
এছাড়া–অন্যায় ভাবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের একটি বাসা তার পরিচিত একজন বেসরকারি স্কুল শিক্ষককে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দেন এই বিবি আয়েশা। পরবর্তীতে বরাদ্দের পর থেকে ওই ব্যক্তি বাসা ভাড়া পাবলিক রেন্টে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি পরিশোধ করছে না নিয়মিত বাসা ভাড়া। যা সরকারের ক্ষতি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কর্মচারী কৃষ্ণ লাল ওয়ার্ড এটেনডেন্ট তার বাসাটি তার ছেলের নামে মিচ্যুয়াল করার আবেদনের জন্য চিঠি দিলে বিবি আয়েশা এক পক্ষ থেকে লাখ লাখ টাকা খেয়ে ঐ বাসা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়ার কথা বলে দরখাস্ত আহবান করেন, যা নিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এবং পরবর্তীতে এডিএমও/ বক্ষব্যাধি ডাঃ জামাল হোসেন উক্ত দরখাস্ত বাতিল করেন।
এ সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে বিবি আয়েশার অফিসে গেলে তিনি প্রতিবেদকে প্রথমে ৫ হাজার টাকার অফার করে নিউজ আটকানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে প্রতিবেদক তাকে আরো বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন যা প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে রেকর্ড আকারে সংরক্ষিত আছে।
এবিষয়ে জানতে রেলওয়ে হাসপাতাল চট্টগ্রামের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ ইবনে শফী আব্দুল আহাদের সাথেও যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন- বিবি আয়েশার অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসএস/ফোরকান