সঞ্জয় দাশের ৯ বছরে ভাগ্য বদল, অঢেল সম্পদের উৎস খুঁজছে দুদক


সকালের-সময় রিপোর্ট  ৩১ আগস্ট, ২০২১ ১:৪৩ : অপরাহ্ণ

বিড়ালের ভাগ্যে যেমন সিকে ছেড়ে, তেমনই অল্প স্বল্প আয়ের উপরেই ছেলেটির ভাগ্য যায় বদলে। ঠিক আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার মতো। বলছি চট্টগ্রাম নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় দাশের কথা।

কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার শ্বেত বন্ধু দাশের ছেলে সঞ্জয়ের ভাগ্যের আমুল পরিবর্তণ আসে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান কে এস আর এম এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকুরিতে যোগদানের পর। চাকুরি নয়, যেন হাতে পেয়েছেন ‘আলাদিনের চেরাগ’।

আজ থেকে ৮-১০ বছর আগেও যার পারিবারিক অবস্থান ছিল নড়েবড়ে। অল্প সময়ে সেই এখন অঢেল সম্পত্তির মালিক। সম্প্রতি কিনেছেন চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় বিলাশ বহুল ফ্ল্যাট, চড়েন ব্যক্তিগত দামী গাড়িতে।

নিজ গ্রামে ও শ্বশুর বাড়িতেও কিনেছেন কোটি টাকার সম্পত্তি। চাকরির পাশাপাশি নামে-বেনামে তিনি যুক্ত আছেন বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অনেকটা বুদ্ধিমর্তার সাথেই বেশ কিছু এলাকায় বিশ্বস্ত সহযোগীদের নামে বিভিন্ন দোকানেও করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিন ভাই ও দুই বোনের এক ভাই কর্মরত রয়েছেন পুলিশে। মাত্র ৫/৬ বছর আগেও তাদের অবস্থা এতটা ভাল ছিলনা যা বর্তমানে দেখছি। মূলত সঞ্জয় দাশ এস আর শিপিং লিমিটেডে চাকরি পাওয়ার পর, ভাগ্যের বদল হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড কুতুবদিয়া নদী টানেল ভিত্তিক জাহাজ ব্যবসার কাজ করে যাচ্ছে বেশ কয়েকবছর ধরেই। কুতুবদিয়া এলাকার সন্তান হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এই সঞ্জয় দাশ। অত্যন্ত চাতুকারিতার সাথেই নিজের ব্যাংক ও থলে ভড়তে বেশ সফলভাবেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছেন সঞ্জয়।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বর্তমানে তার নিজের ও স্ত্রীর নামে বেশ কিছু এফ ডি আর, সঞ্চয় পত্র করেছেন তিনি। তাছাড়া বাবা, মা ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের নামেও রয়েছে সঞ্চয় পত্র ও এফ ডি আর। চাতুকারিতা করে নমিনী হয়েছেন নিজেই।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক একাউন্টে এইসব এফডিআর ও সঞ্চয় পত্র খুলতে তাকে সহযোগীতা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই এক বিশ্বস্ত কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অলাভজনক খাত গুলোকে পুঁজি করে শতকোটি টাকার ব্যাবসা করে যাচ্ছে এই কর্মকর্তা। সম্প্রতি এমনই এক অভিযোগের সূত্র ধরে তার অঢেল সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুদক।

তার কর্মস্থলে মাসিক বেতন, আয় ও অবস্থান জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদকের এসব তথ্য শুনে রীতিমত তাদের মাথার উপরেও যেন বাঁজ পড়েছে। অবাক সবাই। তারাও জানিয়েছে তার এ অঢেল সম্পত্তির উৎস জানার চেষ্টা করছে।

তবে কৌশলি এ কর্মকর্তা দুদকের নজর এড়াতে বেশ ধরেছেন মধ্যবিত্ত কর্মচারীর। যেখানে নিজের কেনা বাড়ি, ফ্ল্যাট অন্যদের ভাড়া দিয়ে মাসে লক্ষ টাকা আয় করে সেখানে নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় মাসে মাত্র ৩০ হাজার টাকা প্রায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকছেন। আর এপথ অনুসরণ করেছেন শুধুমাত্র দুদকের নজড় এড়াতে।

শুধু তাই নয়, তার কর্মস্থলেও যাতে ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তার সন্দেহ না হয় সেজন্য অন্যের নামে কিনেছেন দামি টয়োটা এলিওন গাড়ি। নিজের টাকা দিয়ে সম্প্রতি কেনা নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটটিও ক্রয় করেছেন স্ত্রী আনুশা মজুমদারের নামে।

তারও আগে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে সেটি ভাড়া দিয়েছেন বলেও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে। তাছাড়া ভারতেও বেশ কিছু সম্পদ ক্রয় ও অর্থ পাচারের সাথে জড়িত থাকারও ধারণা করছেন পরিচিতদের কেউ কেউ। তবে ভারতে জমি ক্রয়ের বিষয়টি সত্য বলে জানা গেছে। সবকিছু নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান চলছে।

এতো সব কিছুর পরও মূলত অত্যন্ত চালাকির সাথে সে তার চাকুরী ও ব্যাবসাগুলো পরিচালনা করে যাচ্ছে। তার বিভিন্ন ব্যাবসার বৈধতা নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।

অভিযোগ রয়েছে চওড়া সুদে সে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ছোট বড় দোকান ব্যাবসায়ীদের লোনও দেন। এইসব পরিচালনা করতে সঞ্জয় স্থানীয় লোকজন নিয়ে একটি বলয় তৈরি করে রেখেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্প্রতি লোন নিয়ে তার রোশানলে পড়া এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেছেন, তার চড়া সুদে দেয়া লোনের টাকা আদায় করতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের ব্যাবহার করেন সঞ্জয় দাশ।

যে লোনের টাকা কিংবা সুদের টাকা দিতে দেরি করে সেক্ষেত্রে সে তার তৈরি করা বলয় ও নেতাদের ব্যাবহার করে থাকে। তার সুদের ব্যবসা ও দোকানপাটে বিনিয়োগ করা অর্থ লেনদেনে অন্যতম সহযোগী দেবাশীষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সঞ্জয় দাশের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম জারা ট্রেডার্স। স্ক্রাব এর এ ব্যবসায় তার সহযোগী রিসাদ। তাছাড়া স্কেবেটর ব্যবসা ও জাহাজ ভিত্তিক ব্যবসায়িক কাজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন মিরাজ।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাঁচাই করতে সঞ্জয় দাশের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, এবং তিনি বলেন আপনি এসব বিষয় নিয়ে নিউজ করবেন কেন, আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আপনি নিউজ করলে এই বিষয়ে আপনার অনেক সমস্যা হবে বলে লাইন কেটে দেন।

প্রিয় পাঠক— সঞ্জয় দাশের আরো দুর্নীতির খবর জানতে আগামী পর্বে চোঁখ রাখুন। 

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ