দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ


সকালের-সময়  ১৯ মার্চ, ২০২২ ১:৪২ : পূর্বাহ্ণ

স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা মাটিতে ইতিহাস গড়ে প্রথম জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩৮ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে টাইগারদের এটিই প্রথম জয়।

সেঞ্চুরিয়নে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে লিটন, সাকিব আর ইয়াসিরের হাফ সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন-মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তাতেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে তাদের বিরুদ্ধে ৩৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগার বাহিনী।

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম আর লিটন শুরুটা করেছিলেন বেশ দেখেশুনে। শুরুটা ধীরগতির হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা করে ফেলেন ঠিকই। ২১.৩ ওভারে ৯৫ রানের ওপেনিং জুটি গড়ার পর ৬৭ বলে ৪১ রান করে আউট হন টাইগার অধিনায়ক তামিম। তামিম আউট হলেও ফিফটি তুলে নেন আরেক ওপেনার লিটন। তবে ফিফটি ছুঁয়েই তিনিও হাটেন প্যাভিলিয়নের পথে। ২৪তম ওভারের শেষ বলে কেশভ মহারাজকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন।

মাত্র এক ওভারের ভেতরে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে আরও বেশি চাপে ফেলেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সঙ্গে মাত্র ২০ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ৯ রানে ফেরেন মুশফিক। এরপর চতুর্থ উইকেটে ইয়াসির আলীর সঙ্গে ১১৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের পথে রাখেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলে ফেলুকায়োকে ছক্কা হাঁকিয়ে সাকিব ৫০ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। সাকিবের পর ওয়ানডেতে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ইয়াসির আলীও।

সাকিব-ইয়াসির মিলে ১১৫ রানের জুটি গড়ার পর দলের ২৩৯ রানে ৬৪ বলে ৭ চার এবং ৩ ছয়ে ৭৭ রান করা সাকিব ফিরে যান লুঙ্গি এনগিডির বলে। ৪২তম ওভারের পঞ্চম বলে এনগিডির ফুলটস বলে স্টাম্পের পেছনে শট খেলতে গিয়ে পায়ে লাগিয়ে এলবিডাব্লিউ হন সাকিব। সাকিব ফেরার দুই বল পরেই রাবাদার বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৪৪ বলে ৫০ রান করা ইয়াসিরও। ৪২.১ ওভারে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের রান তখন ২৪৩।

শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৭ বলে ২৫, আফিফ হোসেন ১৩ বলে ১৭ আর মেহেদি হাসান মিরাজ ১৩ বলে ১৯ রান করলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১৪ রানের। ৩১৪ রানের এই স্কোর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় রান টাইগারদের। আজকের আগে সর্বোচ্চ স্কোর ছিলো ২৭৮।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আর শরীফুলের গতি আর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ৩.৫ ওভারে দলীয় ১৮ রানেই প্রথম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। শরীফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জানেমান মালান।

এরপর নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন টাইগার স্পিডস্টার তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম বলেই কাইল ভেরিনিকে ফেরান লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। আর চতুর্থ বলে এইডেন মার্করামকে মিরাজের তালুবন্দি করেন এই পেসার। ৮.৪ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সেখান থেকে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা আর রাসি ভ্যান ডার ডুসেন মিলে। দুজন মিলে শুরুর বিপর্যয় সামলে শতরান পার করান দলকে। দলীয় ১২১ রানে গিয়ে এই জুটি ভাঙেন শরীফুল ইসলাম। দারুণ এক বাউন্সারে ৫৫ বলে ৩১ করা বাভুমাকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের কাছে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন এই তরুণ পেসার।

এরপর ক্রিজে এসে ডুসেনের সঙ্গে আরকেটি জুটি গড়েন ডেভিড মিলার। দুজন মিলে দ্রুত রান তুলতে থাকেন স্কোরবোর্ডে। এই জুটি বিপদজনক হয়ে উঠতে শুরু করলেই আবার আঘাত হানেন এদিন বোলিংয়ে আগুন ঝরানো তাসকিন। ৯৮ বলে ৮৬ রান করা ডুসেনকে ফেরান ইয়াসির আলির ক্যাচ বানিয়ে।

তবে এই আউটে তাসকিনের চেয়ে ইয়াসিরের অবদান কোনো অংশে কম নয়। ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে এসে ডুসেনের ক্যাচ তালুবন্দি করেন ইয়াসির। তাসকিন এদিন সেঞ্চুরিয়নের পিচে আগুন ঝরিয়েছেন তার বোলিংয়ে। ১০ ওভার বোলিং করে ১ মেইডেনে ৩৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন তাসকিন। নিজের দশ ওভারের মধ্যে ডট বলই দিয়েছেন ৪০ টি।

ডুসেন আউট হলেও ক্রিজে বাংলাদেশের বোলারদের তখনো চোখ রাঙাচ্ছিলো মিলার। তবে একপ্রান্তে মিলারের শাসন চললেও ক্রিজের ওপর প্রান্তে উইকেট তুলে নিতে থাকেন টাইগার বোলাররা। অধিনায়কের ভরসার দারুণ প্রতিদান দিয়ে শেষের দিকে মেহেদি হাসান মিরাজ তার স্পিন জাদুতে তুলে নেনে ফেলুকায়ো, মার্কো জেনসেন আর কাগিসো রাবাদা উইকেট। ৪৪ তম ওভারের শেষে স্বাগতিকদের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ২৩১ রান।

এক ওভার পর আবার বোলিংয়ে এসে এবার মিরাজ উপড়ে ফেলেন বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিড মিলারকেও। ৮ চার আর ৩ ছয়ে ৫৭ বলে ৭৯ রান করা মিলারকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। ২৪২ রানে ৯ উইকেট হারানো প্রোটিয়াদের শেষ দুই ব্যাটসম্যান কেশভ মহারাজ আর লুঙ্গি এনগিডি ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হারের ব্যাবধানই শুধু কমিয়েছেন।

৪৯ তম ওভারের পঞ্চম ১৬ বলে ২৩ রান করে ফেলা কেশভ মহারাজকে মাহমুদুল্লাহ এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললে ২৭৬ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে টাইগারদের প্রথম জয়। ৬৪ বলে ৭ চার আর ৩ ছয়ে ৭৭ রান করা সাকিব আল হাসান পান ম্যাচসেরার পুরষ্কার।

আগামী রোববার জোহাসেনবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। টাইগারদের সামনে হাতছানি এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে প্রথম সিরিজ জয় করে ফেরার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯*, তাসকিন ৭*; এনগিডি ১০-১-৭৫-১, রাবাদা ১০-০-৫৭-১, জেনসেন ১০-১-৫৭-২, মহারাজ ১০-০-৫৬-২, ফেলুকায়ো ১০-১-৬৩-১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ (ভেরেইনা ২১, মালান ৪, বাভুমা ৩১, মারক্রাম ০, ফন ডার ডাসেন ৮৬, মিলার ৭৯, ফেলুকায়ো ২, জেনসেন ২, রাবাদা ১, মহারাজ ২৩, এনগিডি ১৫*; সাকিব ১০-০-৫৪-০, শরিফুল ৮-০-৪৭-২, তাসকিন ১০-১-৩৬-৩, মুস্তাফিজ ১০-০-৫০-০, মিরাজ ৯-০-৬১-৪, মাহমুদউল্লাহ ১.৫-০-২৪-১)

ফলাফল: বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে ১-০তে

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ