উত্তাল ইরান–সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহত অর্ধশত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ৩:৪০ : অপরাহ্ণ

ইরানে হিজাব আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় চলমান বিক্ষোভে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অসলোভিত্তিক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এ তথ্য জনায়।

সম্প্রতি রাজধানী তেহরানে হিজাব আইনভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার মাহশা আমিনি (২২) পুলিশ হেফাজতে মারা হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের এক সপ্তাহের মাথায় শুক্রবার হিজাবের পক্ষে পাল্টা সমাবেশ করেছেন সরকার সমর্থকরা।

আইএইচআর জানায়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আট দিনে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে; যা সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১৭ জনের তিনগুণ। এর মধ্যে পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে।

আইএইচআর বলছে, পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুতে শুরু হওয়া এই সহিংসতা ইতোমধ্যে ৮০টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। তেহরানের নীতি পুলিশ হাতে আটক হওয়ার পর ২২ বছর বয়সী ওই কুর্দি তরুণী তিনদিন কোমায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যাচাইকৃত ফুটেজে দেখা গেছে, সরকার-সমর্থিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। কেউ কেউ সশস্ত্র দাঙ্গা পুলিশের মুখোমুখি হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের জমায়েতকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বহির্বিশ্বে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ বন্ধ করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইরান। নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমিনীকে। তিনদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশি হেফাজতে আমিনী মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

আমিনীকে মৃত ঘোষণা করার পর প্রতিবাদে তার জন্মস্থান কুর্দিস্তান প্রদেশের পাশাপাশি ইসফাহান, মাশহাদ, শিরাজ এবং তাবরিজসহ প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

অসলো-ভিত্তিক আরেকটি অধিকার গোষ্ঠী হেনগাও জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের বোকান শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যদিও এই কুর্দি সংগঠনের তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিওতে উত্তর মাজানদারান প্রদেশের বাবোল শহরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছবি সম্বলিত একটি বড় বিলবোর্ডে বিক্ষোভকারীদের আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা গেছে।

একটি ফুটেজে দেখা গেছে শহরের কেন্দ্রস্থল তেরহানের ফেরদৌসি সড়কে বাসিজ মিলিশিয়াদের একটি ঘাঁটিতে আগুন দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ফুটেজটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কিছু নারী বিক্ষোভকারী হিজাব খুলে ফেলেছে এবং আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া প্রতীকীভাবে তাদের চুল কেটে ফেলেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়েছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরান (সিএইচআরআই) জানায়, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাজা গোলাবারুদ, পেলেট বন্দুক এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওতে তাদের প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখা গেছে।

সূত্র—এএফপি, এনডিটিভি।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ