অগ্রহণযোগ্য বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে : ফখরুল


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১৩ জুন, ২০২০ ৮:৫৩ : পূর্বাহ্ণ

২০২০-২১ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকেলে বাজেট নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’, তা না করে অর্থমন্ত্রী গতকাল (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন।

এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে। গত ৯ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে আমরা সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা সমৃদ্ধ তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি বাজেট রূপরেখা দিয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রী আমাদের সুপারিশ ও দেশের অধিকাংশ শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অভিমতকে উপেক্ষা করে প্রত্যাশিত ‘অসাধারণ বাজেটের’ স্থলে নিতান্তই একটি ‘সাধারণ বাজেট’ এর ঘোষণা দিলেন।

তিনি বলেন, এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতি আশা করেছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন।

এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হলো জিডিপির মাত্র ১.৩% মাত্র। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর চেয়ে অধিক অর্থ অ্যাবসর্ব করতে পারবে না এমন খোঁড়া যুক্তিতে স্বাস্থ্য খাতে অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করাই ছিল প্রত্যাশিত।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, বরাদ্দ যাহাই হোক না কেন প্রয়োজন স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার। সে বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে কোনো গঠনমূলক ব্যবস্থা কিংবা সংস্কার প্রস্তাবও নেয়া হয়নি। এমনকি যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেসব প্রকল্পগুলোকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ পরিবহন খাত ও বিদ্যুৎ খাতসহ এমন অনেক খাতে অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না।

সরকারি ভাষ্য মতে, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তাই এ অসময়ে তোড়জোড় করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের কোনো দরকার ছিল না। ১২০০ মেগাওয়াট রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকায় দেশের সবচেয়ে একক ব্যয়বহুল চাপযুক্ত জল-চুক্তি প্রকল্প যা রাশিয়ান এক কোম্পানি কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিয়ে ঐ অর্থ স্বাস্থ্য খাতসহ কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। তা করা হয়নি কারণ রূপপুর কেন্দ্রের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে চায়নি সরকার।

ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় যে কাঠামো থাকা দরকার সেটি পরিপালিত হয়নি। বাজেটের আয় ও ব্যয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বাজেটে কেবল ‘সংখ্যার’ হিসাব মিলানো হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ১১ কোটি টাকা। তন্মধ্যে এনবিআরকেই আয় করতে হবে ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা (অর্থাৎ ৫০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি) যা বাস্তবতা বিবর্জিত।

এনবিআর এ অর্থ আহরণ করতে ব্যর্থ হবে এবং তাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর পক্ষে প্রস্তাবিত ডিফিসিট ফিন্যান্সিং (Deficit financing) এর ৮৫ হাজার কোটি টাকা যোগান দেয় সম্ভব হবে না। এনবিআর এর পক্ষে এত বিপুল রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা ও বাংকগুলোর পক্ষে ঘাটতি অর্থায়নে অক্ষমতার কারণে বাজেট মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

তিনি বলেন, বাজেটে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব নেই। বরং শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে আরও সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা তো কোনো সংস্কার নয়। যা ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়বে।

সরকার বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫%। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের “গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ১.৬% নেমে আসবে এবং ২০২০-২১ বছরে হবে মাত্র ১ শতাংশ”।

তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী এ বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮.২%। আমদানি, রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ম্যাক্রো ইকোনমিক ইনডিকেটরগুলো আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে ৮.২% প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। বিনিয়োগ দরকার ৩২-৩৪ শতাংশ, যা কঠিন এবং অসম্ভব। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ