সচিব কাণ্ডে লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার পৌরসভা!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:১৫ : পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সচিব মো. রাছেল চৌধুরী। একই সঙ্গে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাটাগরির কোনো কর্মকর্তা নন তিনি। প্রায় দেড়শ কোটি টাকা কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রস্তাবনা কমিটির কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য না হয়েও সেখানে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ওই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের গুরত্বপূর্ণ ভূমি রয়েছে তার।

ওই প্রকল্পের প্রত্যাশিত কমিটির প্রতিনিধি না হয়েও তপশিলোক্ত জমির রিসিভার থাকার সত্তে¡ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছেন রাছেল চৌধুরী।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে রাছেল চৌধুরী নিয়মবর্হিভূত কাজটি করার অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে)। মেয়র মুজিবুর রহমানে কথামতোই এসব কাজ করেছে বলে তিনি স্বাীকারোক্তিও দিয়েছে খোদ দুদকে। প্রকল্পের অনিয়মের তদন্তে রাছেল চৌধুরীকে অভিযুক্ত করেছে দুদক।

এদিকে দীর্ঘদিন মেয়র মুজিবুর রহমানের সচিব থাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের ভূমি, তদবির ও অবৈধ উপায়ে বনে গেছেন কয়েকশত কোটি টাকার মালিক। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে সম্পদেরও তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা ছদাহা গ্রামের আবুল মমতাজ চৌধুরীর পুত্র মো. রাছেল চৌধুরী। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের সচিব হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

দুদক সুত্রে জানা যায়, ২০১৯৮ সালের ৩ নভেম্বর এলএ মামলা নম্বর ৪/২০১৯-২০ কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর রয়েছে রাছেল চৌধুরীর। মেয়র মুজিবুর রহমানের নির্দেশ তিনি ফিল্ডবুকে এই স্বাক্ষর করেছে স্বীকার করেছে দুদকের কাছে। এ মামলায় রাছেল চৌধুরীকে অভিযুক্ত করেছে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সাবেক উপসহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার চট্টেশরী রোডে ভেবারলি হিল আবাসিক এলাকায় রাছেল চৌধুরীর এক কোটি টাকার বেশি মূল্যে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাট কেনার পর আরও প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে সংস্কার করেছে ইন্টোরিয়ার ডিজাইন।

সেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিংয়ে রয়েছে তার আরও একটি ফ্ল্যাট। নিয়মিত চলাফেরা করেন প্রিমিও দামি প্রাইভেট কারে। তার দায়িত্ব কক্সবাজার পৌরসভায় দফতরে হলেও অধিকাংশ সময়ে তিনি শহরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন।

তার গ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় রয়েছে গবাদি পশু ও মাছের খামার। রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, সাতকানিয়া ও কক্সবাজার এলাকায় নিজ ও পরিবারের সদস্যের নামে-বেনামে রয়েছে জায়গা ও জমি। বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তার সঞ্চিত রয়েছে মোটা অংকের অর্থ।

জানা যায়, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজার পৌরসভার ঝিলংঝা ইউনিয়নের প্রকল্পের ভূমি অগ্রিহণের তদন্ত শুরু করেছে দুদক। প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে (এলএ মামলা ৪-২০১৯-২০ মূলে) ২ দশমিক ১৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

আরও জানা যায়, ২০১৭ সালে ‘কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার স্থাপন’ প্রকল্পটি হাতে নেয় কক্সবাজার পৌরসভা। পরে প্রকল্পটিতে এশিয়ান ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

প্রাথমিক পর্যায়ে কক্সবাজার পৌরসভার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পুরোদমে বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ১০ লাখ লিটার সুপেয় পানি পাওয়া যাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেয়র সচিব রাছেল চৌধুরী বলেন, তিনি বলেন আমি ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছি মেয়র সাহেবের নিদের্শে। আমি প্রত্যাশিত কমিটির প্রতিনিধি ছিলাম না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চট্টোশরী রোডে ভেবারলি হিল আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটটি আমার বাবার। আমার না। যেসব সম্পদের কথা বলছেন সেগুলো মিথ্যা।

জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন এক দুদক কর্মকর্তা বলেন, রাছেল চৌধুরী ওই প্রকল্পের প্রত্যাশিত কমিটির প্রতিনিধি না হয়েও তপশিলোক্ত জমির রিসিভার থাকার সত্তে¡ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছেন রাছেল চৌধুরী। তার পদবি অনুসারে ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নেই। তাকে এ প্রকল্পের অনিয়মের তদন্তে আসামি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট পৌর মেয়র হিসেবে শপথ নেন। এরপর পানি শোধনাগার স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাগুলো প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শ্যালক মিজানুর রহমানের নামে কিনে নেন মেয়র মুজিব।

তবে প্রস্তাবিত ওই জায়গা নিয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে কয়েক পক্ষের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে হিস্যা সংক্রান্ত মামলা (৫২/৮৬) চলে আসছিল। অভিযোগ উঠেছে, জমি ক্রয়, নামজারি, অধিগ্রহণসহ পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে দ্রততার সাথে। জমি কেনার রেজিস্ট্রেশন থেকে নামজারি, সবশেষ এলএ ক্ষতিপূরণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ