আইওয়াশ দরপত্রে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ 

বান্দরবান গণপূর্তের সরকারি কাজ প্রকৌশলী-ঠিকাদারের ভাগাভাগি!


মোহাম্মদ ফোরকান  ২৬ জুন, ২০২৩ ১১:৩৮ : পূর্বাহ্ণ

সারা বছরেই বান্দরবান গণপূর্ত অফিসে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও ছোট-বড় কাজে প্রকৌশলী-ঠিকাদার কাজ ভাগাভাগি করে টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে এবং প্রকল্পের টাকা গিলে ফেলতে তড়িঘড়ি করে দরপত্র আহ্বান এবং অফিস শুরুর আগে খুব অল্প সময়ে দরপত্র জমাদানের প্রক্রিয়া শেষ করার অভিযোগ উঠেছে।

গত ২০ ও ২১শে জুন সকালে ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ৭টি প্রকল্পের দরপত্র গ্রহণের কার্য সম্পাদন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের এমন তড়িঘড়ি করে প্রকল্পগুলোর দরপত্র জমাদানের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয় ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবী এই দরপত্রে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজগুলো পাইয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মি চাকমা ও সহকারী প্রকৌশলী সুমিত রায়।

জানা গেছে, চলতি জুন মাসের মধ্যে প্রাপ্ত বাজেটের টাকা শেষ করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগ ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ২০শে জুন বান্দরবান জেলায় আরএসকিউইউ এর মাধ্যমে ৬টি এবং ২১শে জুন ১টি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে। ইজিপির লাইভ টেন্ডারে প্রকল্পের দরপত্র জমাদানের জন্য সময় দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা। শুধু তাই নয় বেশিরভাগ প্রকল্পের দরপত্র জমাদানের সময় শেষ হয়েছে অফিস শুরুর আগেই। প্রকল্পগুলোর জন্য ২ লাখ টাকা করে ৭টি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ১৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পগুলো হলো—বান্দরবান গণপূর্ত অফিসের পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানি সাপ্লাই মেরামত কাজ, গণপূর্ত অফিসের কাঁটাতার ও সীমানা প্রাচীর মেরামত, বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পয়নিষ্কাশন পানি সাপ্লাই ও ড্রেন মেরামত, বান্দরবান শিশু পরিবারের ইলেক্ট্রিসিটি মেরামত ফ্যান তার পরিবর্তন, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে বান্দরবান জেলখানার উঠান ও ড্রেন পরিস্কার, ও ড্রেন পরিস্কার এবং বান্দরবান সদর হাসপাতালের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক কাজের মেরামত ট্রান্সফরমারের তার পরিবর্তন। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে দরপত্র জমাদানের সময় শুরু হয়েছে ভোর ৬টা ৫৫ মিনিটে এবং শেষ হয়েছে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে যা অফিস সময় শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে।

এ ছাড়াও ৩টি প্রকল্প ৭টা ৩০ থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং বাকিগুলোও ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চালু ছিল। যে কারণে বেশিরভাগ প্রকল্পে ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেননি।

অফিসের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয় ঠিকাদাররাও গণপূর্ত বিভাগ বান্দরবানের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার কামরুজ্জামান বলেন, এভাবে দরপত্র দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তড়িঘড়ি করে কাজ না করে জুন মাসের মধ্যে বিল উত্তোলন করার জন্য এটা করেছে। ভোরবেলা অল্প সময়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে যাতে অন্য কোনো ঠিকাদার দরপত্র সাবমিট করতে না পারে এবং অফিসের লোকজন নিজেদের পছন্দমতো কোটেশন দিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নিবে।

স্থানীয় ঠিকাদার মেহেদী হাসান জানান, এটা শুধুমাত্র আইওয়াশ। প্রকল্পের নাম দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার জন্য নামকাওয়াস্তে এ দরপত্র দেয়া হয়েছে। না হলে অফিস শুরু হওয়ার আগে দরপত্র ওপেন করা হয়েছে এবং অল্প সময়ে আবার শেষ করে দেয়া হয়েছে। সে সময় অনেকে ঘুম থেকেও উঠেনি।

কারণ—জুন মাস শেষ হয়ে গেলে এ টাকা আর উত্তোলন করতে পারবে না। আর ২০ তারিখ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কাজ শেষ করবে কখন বুঝে নিবে কখন সময় আছে ৪/৫ দিন। এটা আসলে কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে বিল উত্তোলন করার একটি পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই না।

বিষয়টি জানার জন্য বান্দরবান গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মি চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে বান্দরবান গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সুমিত রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে সময় নেই জুন মাস কাজের চাপ বেশি তাই তাড়াহুড়া করে প্রকল্পগুলো দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে রেসপনসিভ লাইসেন্স কোটেশন জমা দিয়েছে সেখান থেকেই যোগ্য টাকে কাজ দেয়া হয়েছে।

আর ইজিপি প্রক্রিয়ার মধ্যে এটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষাকাল এসে বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফোন আসছে কাজগুলো তাড়াতাড়ি করার জন্য। তাই একটু তাড়াহুড়া করে টেন্ডারের কাজগুলো করতে হয়েছে। তবে আগে এভাবে অল্প সময়ে করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য— শুধু আরএফকিউইউই নয় আরএসকিউইউইসহ বিভিন্ন দরপত্র নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত ও বিভিন্ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই প্রকৌশলী-ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ