রায় ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েল

‘চলতি সপ্তাহে’ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১:৫০ : পূর্বাহ্ণ

গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মামলায় চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) এই রায় ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েল।

রায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় এখন কূটনৈতিকভাবে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু। ফোন করেছেন বাইডেনকে। কিন্তু এখনও যুক্তরাষ্ট্র তেমন কোনো সাড়া না দেওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কিছু ইসরায়েলি।

ইসরায়েলের অনেক বিশ্লেষকের দাবি, প্রধান মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না। ইসরায়েলকে আইসিজের রায় থেকে বাঁচানোর এখনই সময়। রায় দিয়ে দিলে তা হবে ইসরায়েলের মর্যাদার ওপর বড় আঘাত। খবর টাইমস অব ইসরায়েল ও জেরুজালেম পোস্টের।

আইসিজের রায় নিয়ে চিন্তিত নেতানিয়াহু সর্বশেষ প্রকাশ্য বিবৃতি দেন গত শুক্রবার। এতে তিনি বলেন, আইসিজের আসন্ন সিদ্ধান্ত ‘বিপজ্জনক নজির’ স্থাপন করতে পারে।

একটি সংবাদপত্রে বিশ্লেষক বেন ক্যাসপিট লিখেছেন, নেতানিয়াহু ‘অস্বাভাবিক চাপের মধ্যে’ রয়েছেন। কারণ, তাঁর ও অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ওপর বড় আঘাত আসবে।

ক্যাসপিট আরও বলেন, বিশেষ করে পরোয়ানা ঠেকাতে নেতানিয়াহু টেলিফোন করে বাইডেনকে খুব করে বলেছেন।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজের বিশ্লেষক আমোস হারেল লিখেছেন, আইসিজের প্রসিকিউটর করিম খান চলতি সপ্তাহে নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এই ধারণা সামনে রেখেই কাজ করছে ইসরায়েল সরকার।

হারেলের মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী ১২৪টি দেশের মধ্যে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এ কারণে তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঠেকাতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি আইসিজের এমন সম্ভাব্য রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা কখনোই আত্মরক্ষা করা বন্ধ করব না। হেগের আদালতের কোনো সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করবে না। এমন পরোয়ানা জারি করা হলে তা হবে সন্ত্রাসবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণতন্ত্রের সৈন্য এবং কর্মকর্তাদের হুমকির একটি বিপজ্জনক নজির।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য বা কৌশলগত সমর্থন ছাড়া নেতানিয়াহু এবং শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো রায় দিতে পারে না বলে মনে করছে ইসরায়েল। দেশটির একটি কূটনৈতিক সূত্রের প্রশ্ন, ইসরায়েলকে বাসের নিচে ফেলে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলেও বাইডেন কোথায়? তিনি নিশ্চুপ কেন?

একই মন্তব্য ও ক্ষোভ উঠে এসেছে জেরুজালেম পোস্টের এক মতামতে। জেভিকা ক্যালিন নামে একজনের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘বাইডেন কোথায়? দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আইসিজে রায় থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার সময় এসেছে’।

এদিকে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জেরে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি কিছুদিনের মধ্যেই পদত্যাগ করতে পারেন। ইসরায়েলের বেসরকারি চ্যানেল ১২ জানায়, হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতায় দায়ী সব কর্মকর্তাকে ঘরে ফিরে যেতে হবে। এর মধ্যে চিফ অব স্টাফও রয়েছেন।

অন্যদিকে, রাফায় ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েল ৬৬ জনকে হত্যা করেছে। এই নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ হাজার ৪৫৪।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page