গলায় ৫০ হাজার ইয়াবা ঝুলিয়ে সাঁতরিয়ে নাফনদী পাড়ি রোহিঙ্গা যুবকের


সকালের-সময় রিপোর্ট ১২ আগস্ট, ২০১৯ ১২:০১ : পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা নুরুল আমিন (২৪) টানা দেড়-দু’ঘণ্টা সাঁতরিয়ে নাফনদ পাড়ি দেয় । শান্ত নাফনদ বর্ষার এসময়ে মাঝে মধ্যে ঢলের স্রোতে বিপদজনকও হয়ে উঠে। তবুও রোহিঙ্গা আমিনদের ভয়ের কোন চিন্তা নেই। নুরুল আমিন প্রায়শ পাড়ি দেয় নাফনদ। তাও খালি নয়।

বড় চালানের ইয়াবা থাকে সাথে। সর্বশেষ ৫০ হাজার ইয়াবার চালান গলায় ঝুলিয়ে নাফনদ পাড়ি দিয়েই রবিবার ধরা পড়ে টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে। এভাবেই তিনি মিয়ানমার থেকে চালানে চালানে ইয়াবা পাচার করে আসছেন বাংলাদেশে।

রোহিঙ্গা পাচারকারি নুরুল আমিন পুলিশকে জানান, প্রথমে ইয়াবাগুলো পলিথিনের প্যাকেটে ভরে পানি যাতে না ঢুকে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরপর পলিথিন আরো কয়েক স্তরের করে ইয়াবার প্যাকেটটিকে গলায় ঝুলিয়ে নাফনদে সাঁতার দেয়া হয়।

নাফনদের ভাটার সময় অনেক স্থানে ঘন্টা বা আরো কম সময় সাঁতরিয়ে এপারে উঠে যাওয়া সম্ভব হয় বলেও জানান পাচারকারি নুরুল আমিন। নুরুল আমিন আরো জানান, নাফনদের এপারে আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিতদের চোখে ধুলো দিয়েই এসব চালান তারা পাচার করে থাকেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ইয়াবা পাচারের এরকম নানা কৌশল প্রসঙ্গে জানান, নাফনদটির প্রশস্ততা দু’দেশের সাথে যেখানেই সবচেয়ে কম সেখানেই রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিনরা ভীড় জমায় বেশি। পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থার সদস্যরা সীমান্তে ইয়াবা বিরোধী অভিযান জোরদার করায় পাচারকারিরা নানা কৌশল নেয় পাচার কাজে।

টেকনাফ থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারকারী নুরুল আমিন জানিয়েছেন, তার গ্রামের বাড়ি মিয়ানমারের মংডু থানার নাফফুরা গ্রামে নাফনদ তীরের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নুরুল আমিন উখিয়ার কুতুপালং সি-ওয়ান শিবিরে পরিবারের ১২ সদস্য নিয়ে বসবাস করেন।

তিনি প্রায়শ আসা যাওয়া করেন মিয়ানমার-বাংলাদেশ। ইয়াবার বড় চালান নিয়ে সাঁতরিয়ে নাফনদ পাড়ি দিয়েই পাচার করে আসছেন। নুরুল আমিন এ পর্যন্ত ইয়াবার চালান পাচার করেছেন বহুবার।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ইয়াবার চালান নিয়ে মিয়ানমার থেকে নাফনদ সাঁতরিয়ে আসা রোহিঙ্গা নুরুল আমিন বড় মাপের ক্রিমিন্যাল। এত সহজে তথ্য প্রকাশ করতে চায় না।

ওসি জানান, তবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে যা জানা গেছে তা হচ্ছে, কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরটি হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় একটি ইয়াবার ডিপো। অগণিত সংখ্যক রোহিঙ্গা পাচারকারি রয়েছে মিয়ানমার থেকে দিবা-রাত্রি নাফনদ দিয়ে ইয়াবা পাচার করার কাজে জড়িত।

টেকনাফ থানার ওসি জানান, নাফনদ তীরের হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরটি বর্তমান সময়ের জন্য ইয়াবার রিসিভিং সেন্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই শিবিরের ইয়াছিন নামের একজন রোহিঙ্গা ইয়াবার বড় একজন ডিলার। পুলিশের হাতে ৫০ হাজার ইয়াবার চালান নিয়ে গ্রেফতার হওয়া রোহিঙ্গা নুরুল আমিন ইয়াবা ডিলার রোহিঙ্গা ইয়াছিনের নিয়োজিত বহুজনের পাচারকারির মধ্যে একজন।

পুলিশ জানায়, মিয়ানমার থেকে নাফনদ পাড়ি দিয়ে ইয়াবার চালান প্রথমে উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরে ডিলারের কাছে জমা হয়। পরে সেখান থেকে ইয়াবার ডিপো কুতুপালং শিবিরে চালান পৌঁছানো হয়ে থাকে।

কুতুপালং শিবির থেকে দেশের নানা প্রান্তের ক্রেতাদের কাছে ইয়াবার চালান প্রেরণ করা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিওগুলো।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page