সিলিন্ডার গ্যাসে প্রতারনার দায়ে হাটহাজারীতে ১ প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা।


১২ আগস্ট, ২০১৮ ৬:১৮ : অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ ফোরকান চট্টগ্রাম:: সরকার গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কিন্তু থেমে নেই প্রতারনার জাল। বিশেষ করে বারবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বছরের পর বছর ধরে অনেক বেশী দামে গ্যাস কেনার বোঝা জনগণের উপর চাপানোর মত বিষয়গুলো নি:সন্দেহে জীবন যাত্রায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগে সরকারী-বেসরকারী এলপি গ্যাসের ব্যবসা রমরমা বাজার হয়ে উঠেছে। নিতান্ত বাধ্য হয়েই লাখ লাখ মানুষ এখন গৃহস্থালীতে এলএনজি গ্যাস সিলিন্ডারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

দেশে উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে এলপিজি এবং আবাসন খাতে গ্যাসের ব্যবহারের হার শতকরা ১৫ ভাগের বেশী হয় না। তবে এ খাতে রাজস্ব আদায়ের হার অনেক বেশী হলেও আবাসিক এবং এলপিজি খাতে মারাত্তক মুনাফাবাজি ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে অস্বাভাবিক উচ্চ হারে এলপিজি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ, অন্যদিকে সিলিন্ডারে নির্দিষ্ট ওজনের এলপি গ্যাসের সাথে পানি ভরে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র ।

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় এলপিজি গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যায়। তার মধ্য হাটহাজারীর মেসার্স নেজাম ট্রেডিং (বসুন্ধরা ডিলার) তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ এরিয়া ম্যানেজার অপু, নিজাম শাহ, মো.নজরুল ও পারভেজ সহ যোগসাজশে করছেন গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা। তাদের রয়েছে হাটহাজারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং সড়কে লন্ডনী বিল্ডিং এর পাশে টিনের চাউনি ঘেরা এলপি গ্যাসের গোডাউন। ঐখানে তারা দিন রাত গ্যাসের বড় বোতল থেকে ছোট বোতলে গ্যাস ট্রেন্সফার করছেন যা দন্ডনীয় অপরাধ।

কিন্তু তা স্থানীয় প্রসাশনের নজরে আসলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার উননেছা শিউলির নেত্বতে তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতেরর মাধ্যমে। তাদের কোন বিস্ফোরক লাইসেন্সও নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, বসুন্ধরা ও বিএম নামের বড় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ছোট গ্যাস সিলিন্ডারে অবৈধ ভাবে গ্যাস ভরে আসছিল দীর্ঘদিন। ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার ক্ষেত্র বিশেষে ২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত পানি ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। বড় সিলিন্ডার থেকেও গ্যাস চুরি করে সাথে বিভিন্ন মাত্রায় পানি ভরে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের ডিলার নেজাম ট্রেডিং ও তাদের সেন্ডিকেট। এলপিজি ডিলাররা মূল্য নির্ধারণেও কোন ধরনের গাইডলাইন মানছেন না। চট্টগ্রামে প্রায় এলাকায় এই অবস্থা বিরাজ করছে।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব ডিভিশন মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মীর টি আই ফারুক রিজভী বলেন: চট্টগ্রাম অঞ্চলের শতাধিক পরিবেশক রয়েছে আমাদের। বসুন্ধরা গ্যাস দেশের সেরা এলপি গ্যাস হিসেবে এরই মধ্যে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি বাজারের অন্যান্য গ্যাসের চেয়ে অনেক নিরাপদ তাই গ্রাম-গঞ্জেও এ গ্যাসের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। কিভাবে নিরাপদে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়, সেই জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও আমরা পালন করি। কিন্তু বসুন্ধরা এলপি গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে ডিলারদের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা মেনে চলার সব সময় সভা মিটিং করে থাকি। তার পরও যদি কোন ডিলার আমাদের নীতিমালার বাহিরে গিয়ে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন করে সে ক্ষেত্রে তার ডিলারশীপ বাতিল করা হবে।

দেখা যায় গ্যাসের ব্যবসা বেসরকারীভাবে উন্মক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাজারে যে সব এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে তার ওজন, গুনগত মান এবং মূল্য নির্ধারণে কোন রকম কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় সংশ্লিষ্ট উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং বিক্রেতারা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ রান্নার কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য ৮৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা বা তার বেশী। যেখানে ৭৫০ টাকা দিয়ে পাইপলাইনের গ্রাহকরা আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে হাজার টাকা খরচ করে কেনা ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারে দুই সপ্তাহও পার করতে পারছেনা গ্রাহকরা।

কিন্তু গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার পর সিলিন্ডারে ৩ থেকে ৫ কেজি পানি অবশিষ্ট থাকে সবসময় এতে করেও ক্রেতারা ডিলারদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেনা। দেশীয় গ্যাসের মজুদ কমে আসার প্রেক্ষাপটে আমাদের গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতেই হবে। অপচয় রোধে সিলিন্ডারে এলপি গ্যাসের সরবরাহ একটি উত্তম উপায় হিসেবে বিবেচিত হলেও এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবসায়িক প্রতারনারোধে কার্যকর উদ্যোগ ও নজরদারী প্রয়োজন বলে মনে করেন ভূক্তভোগীরা। বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতারিত হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেনা চট্টগ্রামবাসী। এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। এই বিষয়ে যেন কোন ধরনের কারসাজি করতে না পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলেও জানান নগরবাসী।

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলি বলেন: এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মান, গ্যাসের বদলে পানি বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরাসহ এমন অপরাধের জন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ অতিব জরুরি। ভেজাল খাদ্য ও ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রমের পাশাপাশি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের ওজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পানি বা ভেজাল তদারকির বিশেষ উদ্যোগে এই সব প্রতারক গ্যাস ডিলার ও ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না ।

এ কারণে গ্যাস সরবরাহে অপচয়, দুর্নীতি, এলপি গ্যাসে প্রতারনা ও অতিমাত্রায় মুনাফাবাজি রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের সম্ভাব্য গ্যাসক্ষেত্র গুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের জরুরী উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমদানীকৃত এলএনজির উপর নির্ভরশীলতা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। অপচয়-দুর্নীতি এবং প্রতারনার বিরুদ্ধে নজরদারী ও জবাবদিহিতা বাড়িয়ে গ্রাহক-ভোক্তাদের বাড়তি ব্যয় থেকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবী।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ