বিষয় :

এসএসসিতে ফেল করায় সাত শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


৭ মে, ২০১৯ ৩:১৪ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া ও ফেল করায় সারাদেশে সাতজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ছয় শিক্ষার্থী ফেল করায় ও অপর এক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

সাভার (ঢাকা) : পরপর তিনবার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঢাকার ধামরাইয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ফারজানা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সোমবাগ ইউপিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফারজানা সোমবাগ ইউপির চাপিল গ্রামের ফারুক হোসেন মেয়ে।

ধামরাই থানার এসআই আব্দুল লতিফ জানান, দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখার পর ওই শিক্ষার্থী নিজের কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। সে এর আগেও দুইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এবার তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষা দিয়েও ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের পর ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে সাহাব উদ্দীন নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার রাতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাহাব উদ্দীন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লালাপুর জঙ্গলবাড়ী গ্রামের একরামুল হকের ছেলে।

সে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর নয়াদিঘী এম রফিক আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। ওই মাদরাসার নৈশ্যপ্রহরী নুরুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে ফলাফল পাওয়ার পর বিকেলে গ্যাসের ট্যাবলেট খায় সাহাব উদ্দীন। পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভা এলাকায় সোমবার দুপুরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত জিপিএ-৫ না পাওয়ায় আসফিয়া মুন্না নিপা নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহত নিপা উপজেলার আথাইল শিমুল গ্রামের আরশেদ আলীর মেয়ে। সে উপজেলার আথাইল শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

ঘাটাইল থানার ওসি মাকসুদুল আলম বলেন, নিপার মা-বাবা দুইজনেই চাকরীজীবী। বাবা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর মা মধুপুর হাসপাতালে চাকরি করেন। এই দম্পতি তিন মেয়ে নিয়ে ঘাটাইল সদর হাসপাতালের পেছনে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সোমবার দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে নিপা জিপিএ ৩.৩৯ পায়। প্রত্যাশিত ফলাফল জিপিএ-৫ না পাওয়ায় ঘরের আড়ের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয় সে। পরে স্থানীয়রা এসে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় পার্বতী রাণী নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার বিকেলে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউপির পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পার্বতী রাণী পলাশবাড়ীর কাশিয়াবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

পলাশবাড়ী থানার পুলিশের ওসি (তদন্ত) মতিউর রহমান জানান, সোমবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানতে পারে সে ফেল করেছে। পরে বিকেলে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে সে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ সৎকারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর: দাখিল পরীক্ষায় ফেল করায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সোমবার সন্ধ্যায় সুমাইয়া আক্তার নামে এক মাদরাসাছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। রামগঞ্জ পৌরসভার টামটা এলাকায় রেহান উদ্দিন মুন্সি বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। নিহত সুমাইয়া আক্তার মুন্সি বাড়ির আমিন উল্যাহ সরকারের মেয়ে।

পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন জানান, সুমাইয়া রামগঞ্জ রাব্বানিয়া কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু মেয়েটি গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে। এতে অভিমান করেই সে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বরিশাল: এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় বরিশালের মুলাদী উপজেলায় হেপি আক্তার নামে এক ছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে আগৈলঝাড়া উপজেলায় তারপিন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তামানা আক্তার নামে আরেক ছাত্রী। সোমবার বিকেলে বরিশালের দুই উপজেলায় পৃথক ঘটনা ঘটে। মুলাদী থানার ওসি সাইদ আহমেদ তালুকদার জানান, মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ বালিয়াতলী গ্রামের মন্টু বেপারীর মেয়ে হেপি আক্তার ছবিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল।

২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার সময় মা মারা যাওয়ায় হেপি আক্তার চার বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। ২০১৯ সালে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুনঃরায় ফেল করায় হতাশ হয়ে পড়ে। সোমবার বিকেলে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। অপরদিকে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় তামান্না আক্তার নামের এক ছাত্রী তারপিন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তামান্না ফুল্লশ্রী গ্রামের হান্নান ফকিরের মেয়ে ও শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নড়াইল: নড়াইলে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ইলা খান নামে এক ছাত্রী মায়ের ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিকেলে সে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। নিহত ইলা খান সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউপির গারোচোরা গ্রামের আজিজার খানের মেয়ে।

শাহাবাদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাচ্চু জানান, ইলা এবার নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সোমবার ফলাফল প্রকাশের দেখা যায় সে পদার্থ বিজ্ঞানে ফেল করেছে। ফলাফলের পর তার বাবা-মা অসন্তোষ প্রকাশ করে। ইলার মা তাকে ভৎসনা করে বলে ‘আমি বাড়ির বাইরে যাচ্ছি, বাইরে থেকে এসে যেন তোর মরা মুখ দেখি’। এরপর ইলা প্রথমে বিষ পান করে। পরে বাড়ির ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। সোমবার রাতেই জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ