বিষয় :

বাবা আমাকে বাচাঁও , কিন্তু নিষ্ঠুর আগুন মৌলিকে বাচতে দিল না!


২৯ মার্চ, ২০১৯ ৯:১০ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: এফআর টাওয়ারের সেই নিষ্ঠুর আগুন কেড়ে নিল তানজিলা মৌলি মিথির জীবন। প্রচন্ড ধোঁয়া আর উচ্চমাত্রার তাপ, অক্সিজেনের অভাব এফআর টাওয়ারে, তখন হয়তো ভেতরে যারা ছিলেন তারা আহাজারি করছিলেন, কি-ই বা করার ছিল মেয়েটার। আগুনে আটকা মেয়েটা বাবাকেও ফোন করেছিল তখন। কথাও হয়েছিল কিন্তু হায়! আহা, জীবন! বাবা বগুরার সান্তাহার থেকে এসে পৌঁছায় ঢাকাতে রাত ৯টার দিকে।

ততক্ষণ তানজিলা মৌলি মিথি কুর্মিটোলা হাসপাতালে। তার লাশ নেবার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছে। সিদ্ধান্ত হচ্ছে কখন কোথায় নেয়া হবে লাশ। প্রথমে ঢাকা মোহাম্মদপুর, তারপর কাফরুল এরপর সান্তাহার। এ সম্পর্কে মিথির একজন স্বজন ইমন নাজমুল ফেসবুকে লিখেছেন, অন্যদিনের মতো বৃহস্পতিবারের সকালটাও সুন্দর ছিল মিথির। বাসা থেকেও বের হয়েছিল সন্ধ্যায় কাজ শেষে ফিরবে বলে।

মিথি নিজেও জানতো না, সুন্দর সকালটা সময় গড়ার সাথে সাথে কালো ধোঁয়ায় পরিণত হবে। বাবা তাকে নিতে আসবে শেষবারের মতো। যে বাবা তার প্রতিটি পরীক্ষায় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন, যে বাবা মিথির বাসায় আসতে একটু দেরি হলে ছুটে গেছেন যেখানে আছে সেখান। সে বাবা আজও এলো তাকে নিয়ে যেতে। আহা.. জীবন। আর নিতে পারছি না। অনেকদিন পর কিছু একটা লিখতে গিয়ে চোখ ভিজে ফেলছি।

নাজমুল লিখেন, আমার বউ তুলিকা, সারারাত কান্না করেছে। ঘুমের মধ্যে কান্না করেছে। মিথির খুব ভালো বন্ধুদের একজন তুলিকা। মিথির এই মৃত্যু মানতে পারছে না। শুধু তুলিকা কেন আমরা তার পরিচিত, সান্তাহারের মানুষরাও তার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। ঝরে গেলো যেই প্রাণ এটার মূল্য কি এতোই হালকা, এতোই কম। নাজমুল বলেন, আমাকে অবশ্য মিথির নিকট স্বজন (এক ভাই) দুপুরে ফোন করেছিল। কথা হলো, বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। আগুন লাগার পর থেকেই তার আত্মীয়-স্বজনরাও নিশ্চিত ছিল কিন্তু! খুব বেশি দিন বিয়ে হয়নি মিথির। স্বামী রায়হানুল ইসলাম রায়হান কাজ করেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসে।

মিথি নিজেও চাকরিতে জয়েন করেছে কিছুদিন আগে। হেরিটেজ এয়ারএক্সপ্রেস নামের কোম্পানিতে। এফআর টাওয়ারের ১০তলায় অফিস। যেখানে ওর মৃত্যু হলো। ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। বনানীর আগুন সান্তাহার পর্যন্ত চলে এসেছে।সান্তাহারবাসীদেরও পোড়াছে। শোকে কারত আমরা, শোকে পাষাণ হয়ে উঠেছি আমরা। সান্তাহারে সম্ভবত প্রত্যেকটি বাসা-বাড়িতে চলছে শোক। মিথি আর কোনোদিন আসবে না প্রিয় সান্তাহারে। দেখা হবে না ওর বন্ধুদের সঙ্গে। কথা হবে না বাবা আর মার সাথে। মিথির ঘরটি শূণ্যই থাকবে, যেখানে শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠেছে মিষ্টি এই মেয়েটি।

আর পারছি না লিখতে। গতকাল অফিসে না গেলেও পারত। গতকাল একটু অসুস্থ থাকলে কি হতো, হয়তো একদিনের জন্য কথা শোনা লাগতো অফিসের কর্মকর্তাদের কিন্তু বাবা-মার কোল তো শূণ্য হতো না। কি নিয়ে বাঁচবে ওর বাবা-মা। সন্তান তো একটাই তাদের। আর কি থাকলো। তানজিলা মৌলি মিথি। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। মিথির বাড়ি আমাদের সান্তাহারের বশিপুর সরদার পাড়াতে। বিয়ে করেন ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট। বাবার নাম মাসুদুর রহমান মাসুদ; পেশায় একজন আইনজীবী।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ