গ্যাস সংকট মোকাবেলায় গত প্রায় এক দশক ধরে রাজধানীতে আবাসিক ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। সাময়িকভাবে সংযোগ প্রদানের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরিভাবে তা বন্ধ করে দেয় জ্বালানি বিভাগ।
গ্যাস বিতরণকারী সব প্রতিষ্ঠানের জন্য বহাল থাকা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) গ্রাহক গত এক বছরে বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক গ্রাহক বেড়েছে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি।
তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর তিতাসের আবাসিকের গ্যাসের গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ জন। তবে ২০১৯-২০ সালে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২ জন। গত এক বছরে নতুন আবাসিকের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ হাজার ৮৮৩ জন।
বিতরণকারী কোম্পানিটির দাবি, পুরনো সংযোগগুলো নবায়ন করায় গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে, যেগুলো আগে তালিকায় ছিল না। নতুন করে কোনো সংযোগ দেয়া হয়নি। যদিও অবৈধ সংযোগকে তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা এ সময়ে বাড়েনি তিতাসের। ২০১৮-১৯ অর্থবছর তিতাসের বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৫। পরের অর্থবছরও এ সংখ্যা অপরিবর্তিতই ছিল।
গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বলেন, আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ। গ্রাহক বাড়ার প্রশ্নই আসে না। তবে এ ধরনের যদি কোনো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে তথ্যের ভুলভ্রান্তিজনিত কারণে হতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত আবাসিকের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি। তবে এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এমডির দায়িত্বে নতুন আসা এ কর্মকর্তা।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের আঙিনায় নতুন সংযোগ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয় ২০০৯ সালে। ওই বছরের ২১ এপ্রিল থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ মে সীমিত পরিসরে আবারো আবাসিকে সংযোগ দেয়া শুরু হলেও কিছুদিন পরই তা আবার বন্ধ রাখা হয়। ২০১৪ সালে মৌখিকভাবে আবাসিকে নতুন করে সংযোগ দেয়ার বিষয়টি জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
তীব্র গ্যাস সংকট এবং অর্থের বিনিময়ে সংযোগ দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সাল থেকে সব গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে বলে জ্বালানি বিভাগ। এরপর থেকে বেশির ভাগ কোম্পানি গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখলেও তিতাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সংযোগ দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
তিতাস গ্যাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির ২০ লাখ গ্রাহক ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ লাখ। এক বছরেই ৭ লাখ নতুন গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পান। পরে তিতাসের এক বোর্ড সভায় নতুন করে সাত লাখ গ্রাহককে বৈধ করা হয়। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছর নতুন করে আরো ৪৬ হাজার গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞার পরও তিতাসের গ্রাহক বাড়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এগুলো আগেরই সংযোগ। নতুন কোনো সংযোগ নয়। ম্যানুয়ালি গ্যাসের বিল করার কারণে কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া হয়নি।
যে কারণে প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা গেছে। নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের। আমরা এলপিজি ব্যবহার করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করছি। আগামীতে আবাসিকে এলপিজি গ্রাহক যাতে বাড়ে, সে বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বাড়ার চিত্র দেখা গেলেও গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং বিল বকেয়ার কারণে ৩ হাজার ৯১১টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে গ্যাস বিল বকেয়ার কারণে ২ হাজার ৫২৭টি ও অবৈধ সংযোগের কারণে ৯৮৬টি আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আবাসিকের বাইরে শিল্প, বাণিজ্যিক, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ সর্বমোট ৩ হাজার ৯১১টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় গ্যাস বিতরণ করছে তিতাস। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এ কোম্পানিটির গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৮। এর মধ্যে আবাসিকে গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২।
আবাসিকের বাইরে সংস্থাটি ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে, তিনটি সার কারখানা, শিল্পে ৫ হাজার ৩১৩, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১ হাজার ৭০১টি, সিএনজি ৩৯৬ ও বাণিজ্যিকে ১২ হাজার ৭৫টি সংযোগ রয়েছে।
এসএস