বিষয় :

রুপালি পর্দার নায়িকারা আ.লীগের এমপি হতে চায়


১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ৪:৪১ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: দেশে ৩৫০ আসনের সংসদে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হলেও সংরক্ষিত আসন বণ্টন হয় ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ নির্বাচনের ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যায় তার আগেই।

৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির দ্বিতীয় দিনে ৪৩১টি ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে মোট ১ হাজার ৫৫টি ফরম বিক্রি হয়েছে। এবার সব নায়িকাই আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হতে চান। নায়িকাদের দৌড়ঝাঁপ এখন সবখানে। যে কোনো অনুষ্ঠান থেকে নেতাদের বাড়ির দরজা খুললেই নায়িকারা মেকআপ দেওয়া সাজগোজ করা হাসিমুখ নিয়ে হাজির।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ক্ষমতায় আসার পূর্বাভাস পেয়ে কিছু দিন থেকেই সিনেমা ও নাটকপাড়ার নায়িকারা ভিড় করেন আওয়ামী লীগে। এফডিসি ও নাট্যপাড়া এখন নায়িকাশূন্য। সবাই নেতাদের বাড়িতেই নয়, দলের কার্যালয়েও ভিড় জমাচ্ছেন। এফডিসিতে আসা-যাওয়া করেন বা মডেলিংয়ে যুক্ত তারাও দৌড়ঝাঁপ করছেন। আওয়ামী লীগের বড় জয়ের পর মৌমাছির মতো সবাই আওয়ামী লীগে ভিড় করছেন। শুটিংয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কমপক্ষে ২০ জনের বেশি নায়িকা।

রুপালি পর্দায় সাড়াজাগানো নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ২০০৮ সালে সংসদে সরাসরি ভোটে এমপি হয়েছিলেন। এবার তিনি মহিলা আসনে এমপি হতে চান। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার ও সাবেক এমপি পান্না কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সারও দীর্ঘদিন থেকে এ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, মৌসুমী ছাড়াও মনোনয়ন চান সুজাতা, পপি, অরুনা বিশ্বাস, অপু বিশ্বাস, মুক্তি, আনোয়ারা, শাহনূর, ফাল্গুনী হামিদ, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, জ্যোতিকা জ্যোতি, চয়নিকা চৌধুরী, সুইটিসহ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী, মডেল, র‌্যাম্প মডেলরাও।

জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নায়িকাদের বেশিরভাগ তাদের সংগঠনে ছিলেন। অন্যদিকে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জিসাস) সভাপতি আবুল হাশেম রানা বলেন, অনেকে শুধু আমাদের সঙ্গেই ছিলেন না, জিয়া স্বর্ণপদকও নিয়েছেন। এখন সময়ের প্রয়োজনে তারা আওয়ামী লীগে গেছেন। সময় হলে আবার ফিরবেন। তিনি বলেন, আমার সংগঠনের সাবেক নেত্রী এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিও হয়েছেন। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য দুই দিনে ১০৫০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

দলটির উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে প্রথম দিন মঙ্গলবার ৬২৪টি ফরম বিক্রি হয়। দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শুরু হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা ধরে এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় করেছে দলটি। সংরক্ষিত আসনের এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদান কার্যক্রম চলবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

এরপর দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেবে দলের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, রুপালি পর্দার ঝলসে ওঠা তারকা নয়, দলের সংরক্ষিত নারী আসনে গুরুত্ব দেওয়া হবে মাঠের ত্যাগী পরীক্ষিত নারীনেত্রীদের। যারা দলের চরম দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠে সক্রিয় থেকেছেন। জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সমাজের আলোকিত নারীদেরও দেওয়া হবে মনোনয়ন। মন্ত্রিসভার মতোই সংরক্ষিত নারী আসনে চমক দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।

এদিকে বুধবার সকালে মনোনয়ন বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম মনিটরিং করতে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মনিটরিং শেষে বের হ?য়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন মনোনয়নে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী।

তেমনি অর্ধেক ভোটারও নারী। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে জনগণের খেদমত করার জন্য তাদেরও আকাক্সক্ষা থাকে। তারাও সংসদে যেতে চান। এ কারণে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তারাও বেশি আগ্রহী। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হচ্ছে। মনোনয়ন কিনলেন তৃতীয় লিঙ্গের আটজন, এদিকে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য নারী প্রার্থীদের পাশাপাশি ফরম সংগ্রহ করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের আটজন।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ