বিষয় :

নেভাল তীরে দাঁড়ালেই বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে মন ভরে যায়


সাবরিনা আলম প্রীতি  ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:৫৯ : পূর্বাহ্ণ

ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ পাওয়া বড় মুশকিল। একঘেঁয়েমী জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পরেন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও।

পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থান। আমাদের সুজলা-সুফলা নদীমার্তৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার।

নগরীর কোলাহল পেরিয়ে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দুরে চোখে পড়বে উত্তাল বিশাল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। কোনো উৎসব, পার্বণ কিংবা ছুটির দিনগুলোতে পতেঙ্গা নেভাল বীচে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহর থেকে নেভালে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে উঁচু উঁচু শিল্প কারখানা, পুরো পথের একপাশে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদী।

কর্ণফুলী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনা চট্টগ্রামে নেভাল বীচ (নেভাল একাডেমী) নামে পরিচিত। নদী আর সাগর এখানে একাকার। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পূর্বে হযরত শাহ আমানত (রা:) আন্তার্জাতিক বিমান বন্দরের সামনে এই স্পটটি চট্টগ্রামবাসীদের কাছে অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। জাহাজ আর ওপারের শিল্প-কারখানার আলোতে সন্ধ্যায় আরো মায়াবী হয়ে উঠে নেভাল এলাকা।

রাতের বেলা নেভাল একাডেমী সংলগ্ন কর্ণফুলী পাড়ের নেভাল বীচ থেকে কর্ণফুলী এবং বঙ্গোপসাগরের মিলন কেন্দ্র মোহনার সৌন্দর্য উপভোগের মজাই আলাদা। মধ্যরাত পর্যন্ত পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত থাকে নেভাল বীচ।

এই নেভাল তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল, দেখা মিলবে বিশ্বের নানা দেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ। স্পীড-বোটে উত্তাল জলরাশির সাথে মিতালি, সমুদ্র তীরেই ঘুড়ে বেরানোর জন্য সী-বাইক করার সুযোগ আছে এখানে।

সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্রবন্দরের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা। সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দিবে আপনার। লক্ষ করুন নানান বয়সী মানুষ কত না আনন্দ করছে সেখানে। নেভালজুড়ে শুরু রাস্তায় সারি সারি বসার চেয়ারগুলোগুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এতে নেভাল বীচের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে।

কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে কাফকো ও ইউরিয়া সার কারখানার লাল-নীল বাতির আলোকছড়া সমুদ্রের জলতরঙ্গে মিশে সৃষ্টি হয় এক চোখ জুড়ানো দৃশ্য। বাঁধ পেরিয়ে সমুদ্রের বালুকা বেলায় পর্যটকদের রসনা বিলাসের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য ছোট ছোট খাবার হোটেল। সাথে যেখানে টায় মিশেছে সেখানে রাস্তার পাশে শত শত মানুষের ভিড়।

অন্যরকম এক আনন্দ উপভোগ করতে সাগরের মৃদু বাতাসের সাথে আপনার নাকে আসবে কাঁকড়া পেঁয়াজুর সুঘ্রাণ। এখানে এসে কাঁকড়া খাওয়ার লোভটা সামলাতে পারেন না অনেকেই। নেভাল সড়কে দলবেঁধে আসেন অনেকেই। পরিবার পরিজন কিংবা বুন্ধ-বান্ধব নিয়ে আড্ডা গানে মেতে উঠেন নদী ও সাগরের মোহনায়।

নেভালে ঘুরতে গিয়ে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে দল বেধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। তবে অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকটায় থাকাই শ্রেয়। সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। কেননা একাকী ভ্রমণে গেলে সৈকতে থাকা ভ্রাম্যমাণ ফটোওয়ালাদের কাছে ছবি তুলতে না যাওয়াই ভালো। স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন! আগে দেখে শুনে ভাড়া শুনে নিলে ভালো হয়।

উল্লেখ্য, গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে উপূকলীয় পতেঙ্গা এলাকায় নেভাল সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে যায়। তার পর পূনরায় নেভাল সড়কটির সংস্কার করায় নেভাল বীচের পূর্বের সৌন্দর্য ফিরে পায়।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ