বিষয় :

নগরজীবনের মারাত্মক সমস্যার নাম শব্দদূষণ!


মোহাম্মদ ফোরকান ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১০:৩৫ : অপরাহ্ণ

বর্তমানে নগরজীবনের মারাত্মক সমস্যার নাম শব্দদূষণ। শব্দদূষণ আমাদের নাগরিক জীবনকে করে তুলেছে বিপন্ন। পরিবেশের ভারসাম্যের অন্যতম প্রতিবন্ধক শব্দদূষণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী- পনেরো বয়সের নিচে জনসংখ্যার মধ্যে শ্রুতি প্রতিবন্ধীর মাত্রা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ২.৫ শতাংশ বেশি। শব্দ দূষণের মাত্রা অব্যাহত থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমাগত বাড়তে থাকবে এবং আগামী দিনের কর্ণধার শিশু লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও মানসিক বিকাশের পথ পরিক্রমা বন্ধ হয়ে বিকারগ্রস্ত হবে।

পরিবেশ দূষণ সমস্যা নিয়ে পুরো পৃথিবী যখন চিন্তিত তখন সভ্যতার অস্তিত্বই এক মহাসংকটের মুখোমুখি। বর্তমানে চট্টগ্রামে শব্দদূষণ ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে শহরটি বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম শহরের মানুষের সুন্দর ও নিরাপদে বসবাস করার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিই পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

নগরায়নের ফলে শব্দের দৌরাত্ম তথা শব্দদূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শব্দদূষণকে শব্দদানব বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি লোকের বসবাস চট্টগ্রাম শহরে এবং প্রায় ৪-৫ লাখেরও বেশি যানবাহন সেই সঙ্গে অসংখ্য কলকারখানা। সহনশীল মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দের কারণে নগরবাসী পরিশ্রান্ত, বিরক্ত, অবসাদগ্রস্ত।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে দেখা যায়, পৃথিবীতে প্রতি বছর শব্দের পরিমাণ গড়ে এক ডেসিবেল করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দের সমস্যা হ্রাস পাওয়া তো দূরে থাকুক, হররোজ সেটা প্রকট আকার ধারণ করছে। গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ণ, কলকারখানা শব্দ, ঢাকঢোলের আওয়াজ, মিছিল মিটিংয়ের শব্দ, মাইক্রোফোনের আওয়াজ, জেনারেটর, রেডিও-টেলিভিশন, নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি স্থাপনা ভাঙার শব্দ, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের শব্দযন্ত্রের ব্যবহার। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, লটারি, টিকিট বিক্রি, পণ্যের প্রচারণা, রাজনৈতিক সভা-বক্তব্য, বিমানের শব্দ, রেলের শব্দ, পুরনো কলকারখানার যন্ত্রপাতি শব্দ, লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের শব্দ, গোষ্ঠীগত কার্যকলাপ, বিভিন্ন হট্টগোল ইত্যাদি।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অপ্রীতিকর শব্দ এমনকি সজোরে প্রীতিকর শব্দ যদি কর্মক্লান্ত প্রহর শেষে কাউকে দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণা দিতে থাকে তাহলে মারাত্মক রকমের মানসিক সমস্যায় নিপতিত হবে। ব্যক্তি এমনকি আক্রমণাত্মক আচরণও দেখা দিতে পারে। ঘুম না হওয়ার কারণে কর্মক্ষমতা, সৃজনশীল প্রতিভার ব্যাঘাত ঘটে থাকে।

আমদের নগরের প্রায় সকলকেই কোনো না কোনোভাবে শব্দদূষণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন করছে। শরীর ও মন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানসিক অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, আবেগ, স্মৃতিশক্তি ও বিচার বিবেচনায় নেতিবাচক পরিবর্তনে স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে মানসিক রোগ। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি পাঁচ জনের একজন কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় ভোগেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। ওয়ার্কশপ, বিভিন্ন ফেক্টরী, যানবাহনের শব্দদূষণের মাত্রা ১১০ ডেসিবেলেরও বেশি হওয়ায় ট্রেড লাইসেন্স না থাকলেও এসব অসাধু ব্যক্তিদের কখনও জরিমানা কিংবা অভিযানের মুখে পড়তে হয়নি বলে তারা বেপরোয়া হয়ে শব্দ দূষণ করছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া যারা অবৈধ ভাবে আবসিক এলকায় ওয়ার্কশপ/ বিভিন্ন ফেক্টরী করে ব্যবসা করছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা জরুরী হয়ে পড়েছে, শব্দ দূষনের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আর যারা বাণিজ্যিক এলাকায় বিভিন্ন ফেক্টরীর ব্যবসা-বাণিজ্য করছে তাদেরকে পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবস্যা করতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সবিহীন কেউও আবাসিক এলাকা ও গণবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি ওয়ার্কশপ/ফেক্টরী করে ব্যবসা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বোপরি “সুস্থ দেহ সুস্থ মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন” কথাটির রেশ ধরে বলা যায় চিত্তের সুখ দেহের সুস্থতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শব্দযন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে অনেকে নেশার ওষুধ গ্রহণ করেন। প্রশান্তিদায়ক ও ঘুমের ওষুধ গ্রহণ, অতিরিক্ত মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার বিষয়ও রয়েছে এখানে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কার্যকরী ভূমিকা রাখা উচিত। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ববোধই পারে বিপর্যস্ত নগরীকে রক্ষা করতে।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ