চট্টগ্রাম এলএ শাখায় ফের সক্রিয় ‘নজরুল’ সিন্ডিকেট!


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৬ জুলাই, ২০২২ ৩:১০ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট চিটাগাং শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ‘আনুকা ফ্যাশন’। চারদিকে সাজানো সারি সারি পাঞ্জাবি-শার্ট। সাধারণ দশটি পঞ্জাবির শো-রুমের মতো দেখতে হলেও এর বাস্তব চিত্র খুবই ভয়ংকর। নামমাত্র এ শো-রুমের আড়ালেই চলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার (ভূমি অধিগ্রহণ) সকল অবৈধ লেনদেন।

যেখানে কৌশলে দোকানের ভেতর তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট কামরা। এই কামরাতেই প্রতিদিনের যাতায়াত রয়েছে স্বয়ং এলএ শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের অভিযানে এমন চিত্র ওঠে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, দিনের বেলায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অফিস করেই সন্ধ্যার পর থেকেই ‘আনুকা ফ্যাশন’র ছোট্ট কামরায় বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাতের অফিস। যেখানে বসে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ভূমি শাখার টাকা লেনদেনের ভাগাভাগি করেন নজরুল।

আর এসব কাজ হয় জেলা প্রশাসকের প্রথম সারির এক কর্মকর্তার নেতৃত্বেই। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা নজরুল ইসলাম বাবুকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও বিভিন্ন গ্রাহকের কমিশনের কোটি টাকার চেকসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার করার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

এলএ শাখার সিন্ডিকেটের ‘সিগন্যাল’

এলএ শাখার অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীই এই সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করেন। মূল হোতা এলএ শাখার প্রথম সারির কর্মকর্তা হলেও তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন গ্রেপ্তার হওয়া নজরুল ইসলাম। তবে তিনি জামিনে এসে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের থেকে আবারও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা তারা পায় সেই টাকা ছাড় করাতে নজরুল সিন্ডিকেটকে কমিশন দিতে হয়।

সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটকে কমিশন না দিলে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে। নজরুলের ‘আনুকা’ নামের দোকানটি সবার কাছে পরিচিত মিনি এল এ শাখা হিসাবে। যেখানে ছুটির দিনেও চলে এমন অবৈধ লেনদেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাগজপত্র নিয়ে এখানে আসতে বলা হয়। কমিশন পেলেই তবে টাকা ছাড় পায় তারা। যা অগ্রিম দিয়ে দিতে হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নানাভাবে হয়রানি করে এই নজরুল সিন্ডিকেট।

সূত্রে আরও জানা যায়, কোন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার প্রাপ্যতা আদায়ে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় যোগাযোগ করলে সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তারা এই নজরুলের সাথে প্রথমে যোগাযোগ করতে বলেন। আর নজরুল তাদের শপিং কমপ্লেক্সের এই দোকানে নিয়ে এসে কমিশনের বিষয়টি প্রস্তাব দেন। কমিশনের চেক বা নগদ টাকা হাতে পেলে নজরুল ‘সিগন্যাল’ দেন এলএ শাখায়।

এ সিগন্যাল পাওয়ার পর অফিস সহকারী (নজরুলের আপন চাচাতো ভাই) সায়েম চেক ইস্যু করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তা হস্তান্তর করেন। আর এসব কাজে সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী। এছাড়া এই সিন্ডিকেটে নাম রয়েছে এলএ শাখার সাবেক একাউন্ট অফিসার লালু ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নিপুতি শীলের। যারা নিয়মিতই ‘আনুকা’ ফ্যাশনের যাতায়াত করেন।

তবে–নজরুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে এসে তাদের  গোপনে আস্তানায় বসে এইসব কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।

নজরুলের ৪ দোকান ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট-গাড়ি বাড়ি

নজরুল ইসলামের ‘আনুকা ফ্যাশন’ নামের এই দোকান ছাড়াও একই মার্কেটে তার নামে রয়েছে তিনটি দোকান। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দুটি এবং অপরটি নিচ তলায়। অভিযান চলাকালিন সময়ে দুদক কর্মকর্তারা নগরীর ওআর নিজাম রোডের আবাসিক এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পায়।

পরে ওআর নিজাম রোড আবাসিকের ৩ নম্বর রোডের ‘জুমাইরা পয়েন্ট’র চার তলায় ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় দুদক। ওই ফ্ল্যাটটি তার স্ত্রীর নামে কেনা বলে জানিয়েছেন নজরুল। ফ্ল্যাটটির বর্তমান মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে ধারণা করছেন দুদকের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ভবনের গ্যারেজে তার একটি প্রাইভেট কারও পাওয়া গেছে। যা দুদক কর্মকর্তারা জব্দ করেন।

এদিকে এলএ শাখার এই কর্মচারীর নগদ ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ এবং গাড়ির সন্ধান পেয়ে বিস্মিত হন স্বয়ং দুদক কর্মকর্তারা। কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব। জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ফাইল কিভাবে অফিসের বাইরে গেল। কি পরিমাণ দুর্নীতি হলে এ অবস্থা হতে পারে।

নজরুল সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানার জন্য এলএ শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

নজরুল সিন্ডিকেটের আরও বিস্তারিত আগামী পর্বে দেখুন……।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ