সুইপারের কেরামতি, টাকা দিলেই হাজারী গলিতে মেলে করোনা টিকা!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ৭ জুলাই, ২০২১ ১২:৫৫ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রাণঘাতী করোনার টিকা নিয়ে হয়রানির যেন শেষ নেই। হরহামেশা এই টিকা নিতে গিয়ে মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও তাদের কষ্টের খবর আসছে প্রতিনিয়ত। কখনো বৃষ্টি উপেক্ষা করে আবার কখনো কাঠফাটা গরমে লম্বা লাইন দিয়েও মিলছে না কাঙ্খিত ভ্যাকসিন।

আবার কেউ কেউ প্রথম ডোজ নিতে পেরেছেন। তবে চিন্তায় পড়েছেন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া নিয়ে। ভোগান্তি চরমে। ছুটছেন সরকারি-বেসরকারি এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। পুরো চট্টগ্রাম নগর জুড়ে যখন টিকা গ্রহিতাদের এমন দৌড় ঝাপ চলছে ঠিক তখনি এটাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি।

তেমনি একজনের খবর গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। যিনি নিজের ব্যাক্তিগত কক্ষকে বানিয়ে ফেলেছেন করোনার ভ্যাকসিন কেন্দ্র। টিকা প্রদানের জন্য যেখানে নানান প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা প্রয়োজন সেখানে পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই পঞ্চাশ জনেরও অধিক ব্যাক্তিকে একাই পুশ করেছেন মরণঘাতী ভ্যাকসিনের প্রতিষেধক টিকা।

তাও আবার প্রতি ১০ জনের শরীরে পুশ করা হচ্ছে ১ ভাওয়েল (করোনা টিকার) শিশির। জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। আবার ক্ষেত্র বিশেষে এর দাম আরো চড়াও হয়। সে হিসেবে প্রতি ভাওয়েল এর দাম ২০ হাজার টাকারও বেশি পড়ে। এভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ ভাওয়েল’রও বেশি পুশ হয়। আয় হয় দৈনিক লাখ টাকারও বেশি।

এসব অপকর্মের মূল হোতার নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে। যার নাম বলরাম চক্রবর্তী বলয়। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলে জানা গেছে।

হাজারী গলির একটি মন্দিরের পিছনে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষকে রীতিমতো করোনার টিকাদান কেন্দ্র বানিয়ে বসেছেন বলয়। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক এজেন্ট। যারা বিভিন্ন স্থান ও হাসপাতাল ঘুরে বিত্তশালী টিকা গ্রহিতাদের তার অস্থায়ী এ টিকাদান কেন্দ্র নিয়ে আসে। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে বলয়ের রয়েছে একাধিক ‘সোর্স’।

তার এজেন্ট ও সোর্সের মাধ্যমে হাসপাতালে টিকা মারতে না পারা বিত্তবান ও প্রবাসীদের কৌশলে টিকা ম্যানেজ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বলয়ের সাথে কথা বলিয়ে দেন।

প্রথমে টিকা দেওয়ার কথা অস্বিকার করলেও টিকা গ্রহীতার দুর্বলতা প্রকাশ পেলে সে কৌশলে নিয়ে যান তার গোপনকক্ষে। টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই করোনার শিশির থেকে কিছু অংশ তার শরীরে পুশ করে দেন নিজেই।

তারই এজেন্ট হিসেবে কাজ করা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করা সর্তে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়িরাই বলরাম চক্রবর্তী বলয়ের টিকাগ্রহীতা। আবার তাদের মাধ্যমেই সে একাধিক টিকা গ্রহিতা সংগ্রহ করেছেন।

আবার অনেক ক্ষেত্রে যারা দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসছে তাদেরকে কার্ডটি সঙ্গে আনতে বলা হয়। সুযোগ বুঝে টিকা পুশ করে দিয়ে ওই কার্ডে লিখেও দিচ্ছে বিশ্বাস যোগানোর জন্য।

এভাবে টাকার বিনিময়ে অবৈধ ও বিপজ্জনকভাবে টিকা দিয়ে গেলেও এই টিকার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারণ টিকার বিধিনিষেধে লেখা আছে, ভাওয়েলের ক্যাপ বা ছিপি খোলার দুই ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ টিকা শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নইলে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানার জন্য বলরাম চক্রবর্তী বলয়ের মুঠোফোনে একাদিকবার কল এসএমএস দেয়া হলেও তার মোবাইল সংযোগ বিজি পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বলরাম যে টিকাগুলো মানুষের শরীরে প্রয়োগ করেছে তা আদৌ করোনার টিকা কিনা তা সন্দেহ প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার। তিনি বলেন, ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে তাকে পুলিশে সোপর্দ করুন। এরপর জানা যাবে এগুলো সে কোথা থেকে এবং কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিও একই কথা বলেন, তাকে পুলিশের কাছে তুলে দিন। সিভিল সার্জন বলেন, করোনার টিকা পাবলিকের হাতে যাওয়ার কোন সুযোগই নেই।

প্রিয় পাঠক, বলরাম চক্রবর্তী বলয়ের আরো অপকর্মের খবর জানতে আগামী পর্বে চোঁখ রাখুন..

সূত্র: ডিকে/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ