জামাই সিন্ডিকেটের আড়ালে ডিজিটাল প্রতারণা!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১৩ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৫ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় জায়গা-জমির দাম বৃদ্ধি করে হরহামেশা প্রতারণা করছে জামাই সিন্ডিকেট নামে হাজারীগলি ভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট। তাদের প্রতারণার শিকার অহরহ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, প্রতারক চক্রটি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহার করে পায়দা লুটার পাশাপাশি বীরদর্পে জায়গার প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে।

সম্প্রতি অনিল ধর, অনিল গংয়ের সাথে অলোক খাস্তগীর, মোঃ আশরাফ হেসেন চৌধুরী, অনিন্দ্য চৌধুরী, অভিজিত চৌধুরী, ও চন্দন কুমার ধর মিলে ফিরিঙ্গি বাজারে জায়গার বায়না নিয়ে এমন একটি ডিজিটাল প্রতারণার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি প্রতারণা মামলা করেছে ভুক্তভোগী অনিল গং। মামলা নম্বর—১৫

জানা যায়, চট্রগ্রাম নগরীর কোতায়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজারের গুরিবাজার মৌজার ২০৭ নম্বর খতিয়ানের ৭৯৭ বিএস দাগের এই জায়গাটি আদালত কর্তৃক বাতিলকৃত অবৈধ বিএস খতিয়ানের জায়গা। কিন্তু এই জায়গাটি ‘সারদা কানন’ সনাতনী আবাসিক প্রকল্প নাম দিয়ে জামাই সিন্ডিকেট চক্রটি সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের সাথে শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপরোক্ত মৌজার ২০ গন্ডা ভুমির আরএস-খতিয়ানের প্রকৃত মালিক মথুরা মোহন, হরিদাস মোহন, লাল মোহন, অমর কৃঞ্চ, কামিনী কুমার, অশ্বিনি কুমার, ছন্দ্র কুমার ও শীষ ছন্দ্র মোট আট জন।

এই আট জনের মধ্যে ৭ জনকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত্যু দেখাইয়া এডভোকেট আশরাফুল আলম (রাজ্জাক) ও ভূমিদস্যু অলক খাস্তগীর প্রকাশ (অলিখ্যা) এই দুইজন যোগসাজসের মাধ্যমে অমর কৃষ্ণের ওয়ারিশ বানাইয়া অনিদ্য, অভিজিৎ, সূজলা নামীয় ব্যাক্তিগণ হইতে বিগত ৮/৫/১২ইং কমিশনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রিকৃত ৮০১৫ নং আমমোক্তার নামা সৃজন করে নেন।

উক্ত আমমোক্তার নামা মুলে ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অনিল কান্তি ধর, অনিল গং হইতে নগদ ও চেকে এক কোটি টাকা হাসিল করেন অলিখ্যা ও রাজ্জাক।

পরবর্তিতে অলিখ্যা ও রাজ্জাক অনিল গং এর চুক্তির কথা গোপন করে যোগসাজশে বাতিলকৃত বিএস ২০৭ খতিয়ানের রেকডিয় ফজল করিমের ওয়ারিশ রাজু গং ও তাদের অবৈধ বায়না দার শফিক আদনান, খোকন, ফারুক এর সহিত আঁতাত করিয়া আপীলকৃত মিছ মামলা ১৩০/২১ এ সোলেনামা দেওয়ার নামে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত আছেন।

জায়গা-প্লট বিক্রির লোভনীয় অফারে ‘শারদা কানন’নের প্রতারণা!

এমতাবস্থায় শফিক আদনান গং আইন বহিরভূত বায়না নামার অনুবলে বিগত ৩০শে জুলাই ২০২১ইং জনি ধর, অর্পণ ধর, শ্যামল ধর, চন্দন ধর, বাসু ধর, নামীয় ব্যক্তিদের বরাবরে একখানা চুক্তিনামা সম্পাদন করেন। উক্ত চুক্তি নামার ক্ষমতাবলে জনি গং সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ফ্ল্যাট বিক্রি ও শেয়ার বিক্রির নামে লিফলেট ছেড়ে অভিনব প্রতারণা করে আসছে।

ইতিমধ্যে ‘সারদা কানন’ জনি গং ৫০-৬০টি শেয়ার বিক্রি করে সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা যায়।

অপরদিকে রাজু গং ভুল ভিত্তিহীনভাবে সৃজিত বিএস ২০৭ খতিয়ানের অবৈধ মালিক সেজে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ১৫ কোটি টাকা আয়ত্বে নেওয়ার মরিয়ায় লিপ্ত। অথচ উক্ত খতিয়ানটি এপি লিষ্টে অন্তভুক্ত এতদসত্বেও ভোক্তভোগী অনিল গং নিরুপায় হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে আবেদন করেছেন।

অপরদিকে এডভোকেট আশরাফুল আলম (রাজ্জাক) ও অলক খাস্তগিরের নামে দেওয়া আমমোক্তার নামাই বিক্রির ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাহারা দুইজনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লেখিত আমমোক্তার নামায় জালিয়াতি ভাবে বিক্রির কথা উল্লেখ্য লিপি করেন।

অবৈধ বায়না অবৈধ চুক্তি করিয়া শফিক আদনান গং যোগসাজসপূর্বক সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের সাথে প্রতারণামূলক ভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণের নামে সংখ্যলঘু সম্প্রদায়কে নি:স্ব করছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের এক আইনজীবি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময় ডটকমকে বলেন, মৌরশী বা আরএস খতিয়ান যে অংশ বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয় তা পর্রবর্তীতে বিএস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হলে তা আইনগত বৈধ।

কিন্তু অনেক সময় অনেকে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পত্তি নিজের নামে বিএস খতিয়ান করিলে ঐ বিএস খতিয়ানের সাথে আরএস খতিয়ানের মালিকের হস্তান্তরের মিল না থাকলে উক্ত খতিয়ান বাতিলের জন্য যথাযথ আদালতে মামলা করলে তা বাতিল হয়ে যায়।

তেমনি উপরোক্ত ফজল করিম গং এর বিএস ২০৭ নং খতিয়ানের সাপোর্টে খরিদা ৫টি দলিলের সাথে আরএস মালিকের কোন বিক্রয়ের মিল না থাকায় উক্ত খতিয়ান ভুল ভিত্তিহীন বাতিল যোগ্য হবে সর্বময় আদলতে।

এ বিষয়ে জানার জন্য ‘সারদা কানন’ প্রকাশ জামাই সিন্ডিকেটের জনি ধরসহ কয়েকজনকে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তারা কল রিসিভ করেনি।

প্রিয় পাঠক, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরো ৩টি প্রতিবেদন থাকছে আগামী পর্বে সাথে থাকুন।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ