সিডিএ’তে বন্ধ নতুন ভবনের নকশার অনুমোদন–চরম স্থবিরতা


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১:২৪ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথোরাইজেশন ও পরিকল্পনা বিভাগে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের পর এ বিভাগে বন্ধ রয়েছে নতুন ভবনের নকশার অনুমোদন কার্যক্রমসহ যাবতীয় কাজ।

সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, দুদক কর্মকর্তারা বেশ কিছু ফাইল তলব করেছেন, যার সংখ্যা চার থেকে পাঁচ হাজার হবে। এসব ফাইল দেখে এক জায়গায় করতে সিডিএ’র অথোরাইজেশন ও পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে। এ কারণে নতুন কাজ এখন করা হচ্ছে না। এদিকে, অঘোষিতভাবে কাজ বন্ধ থাকায় ভবনের নকশার অনুমোদনসহ নানা প্রয়োজনে আসা মানুষ ঘুরছেন সিডিএ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে।

ভবনের নকশা অনুমোদনের ফরমে ভুয়া ব্যাংক স্লিপ যুক্ত করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সিডিএ কার্যালয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযান চালায় দুদক। দুদক চট্টগ্রাম-১-এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। সে সময় দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের হটলাইন ১০৬-এ ফোন পেয়ে সিডিএতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযানে আমরা বেশ কিছু ফাইল দেখেছি। এর মধ্যে দু-তিনটিতে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত বাকি ফাইল দুদক কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। সব ফাইল দেখার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কতটি ফাইলের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম নগরীতে ভবন নির্মাণ করতে হলে সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন নিতে হয়। ভবনের নকশা অনুমোদনের ফরমের সঙ্গে এনওসি বাবদ এক হাজার টাকা, নকশা বাবদ দুই হাজার টাকা এবং সিডিএ কর্মচারী কল্যাণ ফান্ডের জন্য ২০ টাকা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয়।

সাধারণত আবেদনকারীরা হয়রানি এড়াতে সিডিএ’র কর্মচারীদের দিয়ে এসব ফরম জমা দিয়ে থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ব্যাংকের ভুয়া সিল-স্বাক্ষরে আত্মসাৎ করা হয়েছিল।

এ ঘটনা তদন্তে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী এ জি এম সেলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে এ তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়; কোন ফাইলে কত টাকা জমা হয়েছে তা জানাতে ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা তা জানানোর জন্য আমাদের কাছ থেকে দুই মাসের সময় চেয়ে পুনরায় চিঠি দিয়েছেন। আমরা অবশ্যই আরও আগে দেওয়ার জন্য বলেছি। ব্যাংকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি পর্যালোচনা করে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, নকশা অনুমোদনসহ নানা বিষয়ে অথোরাইজেশন ও পরিকল্পনা বিভাগে এতদিন ম্যানুয়ালি টাকা জমা নেওয়া হতো। এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ টাকা জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু কারচুপির সুযোগ থাকে, যা ডিজিটালে করা সম্ভব নয়। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আলোচনা হওয়ার পর আমরা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে দুদক তদন্ত করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। দুদকের চাহিদার ফাইলপত্র পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দুদক তদন্ত শেষে ত্রুটি পেলে সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।

দুদক চট্টগ্রাম-১-এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত রবিবার বলেন, সিডিএ’র পক্ষ থেকে কিছু ফাইল জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। দুদক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে ফাইলগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র–বিটি/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ