বহদ্দারহাট ঘিরে যার একক রাজত্ব, কে এই ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী’ জাবেদ!


সকালের-সময় রিপোর্ট 

১৯ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৭ : পূর্বাহ্ণ

তাঁর নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন বহাদ্দারহাটের মানুষ। চাঁদাবাজি, কথায় কথায় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা, মারধর, হুমকি-ধমকি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা সবকিছুই যেন তাঁর কাছে মামুলি ব্যাপার। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ রয়েছে অজস্র অভিযোগ। এরপরও তিনি দাপিয়ে বেড়ান ক্ষমতার দাপট নিয়ে। তাঁর দাপটে অতিষ্ঠ বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ মানুষ।

যাঁর এত ক্ষমতা তিনি ‘জাবেদুল ইসলাম জাবেদ’। চাঁদাবাজি মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি এই জাবেদ চান্দগাঁও থানার ঘাসিয়াপাড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে। এলাকায় নিজেকে তিনি পরিচয় দেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে। তবে এসবের আড়ালেই নিয়ন্ত্রণ করছেন অপরাধ জগৎ।

জানা গেছে, বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার এলাকার একটি ছিনতাইকারী গ্রুপের দলনেতা বুইশশ্যার সঙ্গে দারুণ সখ্যতা রয়েছে জাবেদের। কোথায়, কীভাবে, কোন প্রতিষ্ঠানে ভয় দেখাবে—এসবের নির্দেশনা দেন তিনি। তার অপকর্মের ভয়ংকর তথ্য আছে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে। সে বুইশ্যার সহযোগী, তবে বুইশ্যা এখন কারাগারে থাকায় তাঁর দলের সদস্যদের দেখভাল করছেন জাবেদই।

রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে খোদ ‘পুলিশকে’ও দেখান ক্ষমতা। এসব কাজে ব্যবহার করেন ‘নেতা’ থেকে শুরু করে ‘এপিএসদের’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালে বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেটে চাঁদা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে হামলা চালান জাবেদুল ইসলাম জাবেদ। এ সময় দেশি অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিও ছুঁড়েন তিনি। এরপর কেটে যায় একদশক। অস্ত্রটিও উদ্ধার হয়নি আজো। তবে এখনও ভয়ে এ ঘটনায় মুখ খুলতে রাজি নন কোনো ব্যবসায়ী।

বহদ্দারহাট—চকবাজার এলাকার একাংশ ঘিরেই সন্ত্রাসী জাবেদের একক রাজত্ব। একের পর এক ঘটনা ঘটালেও প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে দাপটের সঙ্গে চলেন তিনি। সম্প্রতি পুলিশের সামনে বহদ্দারহাটে এক ব্যবসায়ী নেতাকে মারধরের চেষ্টা চালান তিনি।

এত অভিযোগের পরও থামছে না জাবেদের অপকর্ম। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের অনেকেই তাঁর নামে করেছেন একাধিক মামলা। কিন্তু এতেও তাঁর দাপট এতটুকুও কমেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জাবেদকে ছায়া—মায়ার জালে জড়িত রেখেছেন চসিক মেয়রের ‘এপিএস’ পরিচয় দেওয়া দুলাল। তার আশ্রয়—প্রশ্রয়ে আজ সে বেপরোয়া। আমরা এই সন্ত্রাসী জাবেদের বিচার চাই।

এদিকে অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বহাদ্দারহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার সাধারণ মানুষ জাবেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় চাদাঁবাজি, মাদক, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ আছে, কেউ তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অপহরণ করে ব্যক্তিগত টর্চার সেলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। ২০১২ সালে বহদ্দারহাট স্বজন মার্কেটে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে আলোচনায় আসা জাবেদ এখন বহাদ্দারহাট এলাকার ত্রাস।

জাবেদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চান্দগাঁও থানার চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় আবু সাঈদ মুন্নাকে মারধর করেন জাবেদ। এ সময় জাবেদ হাতে থাকা অস্ত্রের আঘাতে মুন্নার মাথা ফাটিয়ে দেন। এ ঘটনায় মুন্না বাদি হয়ে জাবেদসহ ৬ জন এবং অজ্ঞাত আরো ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলাও করেন।

২০১৮ সালে জুলাইয়ে নগরের চান্দগাঁও থানার ম্যানিলা হোটেলের সামনে একটি বাস ভাঙচুর করে চালককে মারধর করেন জাবেদ। এ সময় চালকের পকেটে থাকা ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন তিনি। এ ঘটনায় বাসচালক আরিফ বাদি হয়ে জাবেদসহ ৬ জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

একই বছর নগরের চকবাজার থানার পূর্ব ষোলশহর হামিদ স্কুলের পাশে সাহেদ হোসেন নিজের জায়গায় ভবণ নির্মাণ করতে গেলে জাবেদ দলবল নিয়ে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় শ্রমিকদের মারধর করে নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাহেদ হোসেন বাদি হয়ে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

২০২১ সালে চান্দগাঁও কাঁচাবাজারের শহীদ হোসেন মজনুর দোকান থেকে ৯ কেজি মুরগি কিনেন জাবেদ। মজনু দাম চাইলে ক্ষুব্ধ হন জাবেদ। এরপর মজনুকে অপহরণ করে তাঁর ঘাসিয়াপাড়ার টর্চার সেলে নিয়ে যায়। চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরে মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করেন জাবেদ। টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে ছাড়া পান মজনু।

এ ঘটনায় জাবেদ হোসেনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলা করেন মজনু। একই ঘটনায় বহদ্দারহাট বারইপাড়া ও ঘাসিয়াপাড়া ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ মিলে র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও সার্কেলে একটি লিখিত অভিযোগও দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাবেদুল ইসলাম জাবেদের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ