দুদকের জালে ফেঁসে গেলেন রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক কারবারি আমজু


নিজস্ব প্রতিবেদক  ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৪৯ : পূর্বাহ্ণ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি রাঙ্গুনিয়ার মো. আমির হামজা প্রকাশ আমজু। তিনি প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অথচ দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি উক্ত সম্পদের উৎস দেখাতে পারেন নি। এ ঘটনায় গতকাল আমজুর বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলা করেছেন কার্যালয়–২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মাদক কারবারি মো. আমির হামজা ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। পাশাপাশি ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মো. আমির হামজা রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার আধুরপাড়ার মৃত মো. ইউসুফের ছেলে।

দুদক সূত্র জানায়, মো. আমির হামজা একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় মাদকদ্রব্য আইনের মামলা রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল দুদকের পক্ষ থেকে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ করা হয়। পরের মাসের ২ মে তার পক্ষে তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার নোটিশ গ্রহণ করেন এবং সময় বৃদ্ধি চেয়ে একটি আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাত দিনের সময় বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে বৃদ্ধি করা সময়ের মধ্যেই আমির হামজা তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি তার নাম মো. আমির হামজা উল্লেখ করলেও স্থানীয়ভাবে তিনি আমজু নামে পরিচিত।

সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী, আমির হামজা নিজ ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫০ টাকার স্থাবর ও ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৭ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি নিজ ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হা্‌জার ১৩২ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে, আমির হামজা ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮২ টাকার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী মো. আমির হামজা মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্ড আবিদ ফার্নিচার ও মেসার্স বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল নামের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি উক্ত আয়ের স্বপক্ষে বৈধ কোনো তথ্য বা রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। সম্পদ বিবরণীতে তিনি ঋণ থাকার ঘোষণাও প্রদান করেন। কিন্তু যাচাই করলে ঋণ গ্রহণ সংক্রান্তে কোনো প্রামাণ্য রেকর্ডপত্র তার কাছে পাওয়া যায়নি। মূলত তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ঋণ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা বৈধ করার চেষ্টা করছেন।

দুদক সূত্র জানায়, মো. আমির হামজা মেসার্স বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল এবং মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্ড আবিদ ফার্নিচার নামে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে ব্যবসা পরিচালনার কথা বলেছেন। কিন্তু মেসার্স বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল থেকে তিনি কত টাকা আয় করেছেন, কত টাকা আয়কর বা রাজস্ব প্রদান করেছেন এবং আয়ের স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। মেসার্স বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল নামের প্রতিষ্ঠানটি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিলের পূর্বের দেড় বছর আগে নির্মাণ করেছেন।

কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, খাদ্য বিভাগের অনুমোদনপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। সম্পদ বিবরণীতে ৬০ শতক পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ করেন বলে ঘোষণা দিলেও এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্ড আবিদ ফার্নিচার নামের ফার্নিচার ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলা হলেও এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক নুরুল আলম বলেন, সম্পদ বিবরণীতে মো. আমির হামজা ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের ঘোষণা দিলেও এর স্বপক্ষে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো রেকর্ডভিত্তিক তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি নিজেও কোনো তথ্য–প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেননি। তিনি উক্ত সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্র-ডিএ/এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page