ইকবাল ট্রেডিং এর প্রতারণা!

চট্টগ্রামে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা তেঁতুলের রমরমা ব্যবসা


মোহাম্মদ ফোরকান ২৫ আগস্ট, ২০১৯ ২:১৪ : অপরাহ্ণ

মানব দেহের দরকারী ঔষধি গুণে ভরা ফলের নাম তেঁতুল। তেতুঁল দেখলে জীভে জল আসে না এমন মানুষ খুবই কম দেখা যায়। তেতুঁলের পরিকল্পিত আবাদ না থাকলেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজ উদ্দিন বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের দোকানে এখন তেঁতুলের দেখা মেলে। আচার-চটপটি ও সালাদ থেকে শুরু করে নানা রকমের মুখরোচক খাদ্য দ্রব্যেই ব্যবহৃত হয় তেঁতুল। তেঁতুল হজমেও উপকারী যা খাবারে স্বাদ এনে দেয়। ফলে সারাবছর তেঁতুলের চাহিদা থাকার কারণে তেঁতুল হয়ে উঠেছে অর্থকরী ফল। তেঁতুলের বাণিজ্যিক ব্যবহার থাকায় এর একটা বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। তবে তেঁতুল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ চলে অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজ উদ্দিন বাজার দীর্ঘদিন ধরে তেঁতুল সংরক্ষণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে আসছে কিছু ব্যবসায়ীরা। তবে এসব তেঁতুল চরম অপরিচ্ছন্ন নোংরা অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় সংক্ষরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এসব তেঁতুল খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত হলে মানবদেহের জন্য নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তেঁতুল সংরক্ষণে অসচেতনতা ও সুষ্ঠু বাজার ব্যাপস্থাপনার অভাবে খাদ্যপ্রাণ তেঁতুল হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর খাদ্য উপকরণে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতিবছর প্রায় হাজার হাজার টন তেঁতুল দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি তেঁতুল সংগ্রহের মৌসুম। এসময় প্রত্যন্ত এলাকা পাইকাররা তেতুল কিনে নিয়ে বাজারজাত করেন।পাইকারদের কাছ থেকে আড়তদাররা এসব তেঁতুল কিনে নেন। এরপর নারী ও শিশু শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে পর্যাক্রমে গোডাউনে স্তুপ করে রাখা হয়। গোডাউনের ধূলা বালি আঠাযুক্ত তেঁতুলে খুব সহজে আটকে যায়। পরে প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। বিশেষকরে এইসব তেতুঁল বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ভেষজ ঔষধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়ে ঔষদে মিশ্রণ করে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স ইকবাল ট্রেডিং, ১০ জেবুনেচ্চা রোড, রিয়াজ উদ্দিন বাজার চট্টগ্রাম, তিনি জেবুনেচ্ছা মার্কেটের দুতলায় অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন একটা ঘরে তেঁতুল ওজন দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন ইকবালের এক কর্মচারী। এবং ঐ কর্মচারী নিজে নিজে আবার তেঁতুলের আঁশ ছাড়ানোর কাজ ও করছেন। কিন্তু তেঁতুলগুলো এতটাই নোংরা দেখলে সাথে সাথে বমি হওয়ার উপক্রম হবে যে কারো। এই তেঁতুল আবার পা দিয়ে মাড়িয়ে বস্তাবন্দি করছেন তিনি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এভাবেই খাদ্য প্রাণ তেঁতুল বস্তাবন্দী ও প্যাকেটজাত করছেন কুমিল্লার বাসিন্দা, মেসার্স ইকবাল ট্রেডিং, তার আবার খাতুনগঞ্জেও চানঁমিয়া রোডের ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচে একতা স্টোর নামে আরো একটি বড়ই, তেতুল, আচার মসল্লার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে এই প্রতারণা মূলক ব্যাবসা করে ইতি মধ্য পশ্চিম বাকলিয়া, ছৈয়দ শাহ রোডে জায়গা কিনে ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইকবাল ট্রেডিংয়ের এক কর্মচারী সকালের-সময়কে বলেন, মেসার্স ইকবাল ট্রেডিং প্রায় ১৫/২০ ধরে এই প্রতারণা মুলক কাজ করে আসছেন, রিয়াজ উদ্দিন বাজারে নোংরা তেঁতুল ব্যবসায়ীদের রয়েছে একটি বিশাল সেন্ডিকেট, তাদের সাথে থানা/ ডিবি ম্যানেস আছে, তাই তারা এই ভাবে বুক ফুলিয়ে এই ব্যবসা করছেন। আমি ৫০ টাকা মণ হিসেবে তেতুলের আঁশ বাছাইয়ের কাজ করি এবং ওজন করে প্যাকেটজাতকরি। এই ময়লা আবর্জনা নিজের চোখে দেখতে দেখতে অব্যস্থ হয়ে গেছি তাই আমি আমার বাচ্চাদের কখনো তেঁতুলের আচার কিনে দেই না।

মেসার্স ইকবাল ট্রেডিংয়ের কর্মচারী নাছির সকালের-সময়কে বলেন, আমাদের তেঁতুল ময়লা আবর্জনা হলেও চলে। আমরা খুচরা প্যাকেট ৫০০ গ্রাম আর ১ কেজি করে চকচকে প্যাকেটে ভরে তা বিক্রি করি, মানুষ এতো কিছু দেখে না। আর এই তেঁতুল বিল্ডিংয়ের কাজেও ব্যবহার হয়। আমাদের গোডাউন ও নিচের দোকানের তেঁতুলগুলো তেমন ভালো না, অপরিচ্ছন্ন নোংরা তারপরও মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে আমি কি করবো এটা মালিকে জানে তাই খোলা বাজারে তেঁতুল প্যাকেটজাত করে করে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছি আমরা। নাছির আরো বলেন, এসব তেতুল অপরিচ্ছন্নভাবেই চালান করা হয়। আমার মালিক থানাকে টাকা দেয় তাই এগুলা করতে পারে। ইকবাল স্টোরের তেতুঁল ময়লা, অপরিচ্ছন্ন দুর্গন্ধ এমনটাই দাবি স্থানীয় দোকানদারদেরও।

এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময়কে বলেন, মেসার্স ইকবাল ট্রেডিং জেবুনেচ্ছা রোডের মার্কেটের দুতলায় পচা তেঁতুলের গোডাউন করেছেন। তেতুলের গন্ধে আমরা ব্যবসা করতে পারিনা। বারবার তাকে বুঝিয়ে বললেও সে এখান থেকে গোডাউন সরাচ্ছে না। সে আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত ও করছেন না। তেঁতুলের গন্ধে আমরা ব্যবসায়ীরা সবাই অতিষ্ঠ। এসব তেতুল খাবারে ব্যবহৃত হলে পেটের পীড়াসহ পাকস্থলীর নানা রোগ হতে পারে বলে জানান ইকবাল স্টোরের আশে পাশের দোকানিরা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: আজিজুর রহমান সকালের-সময়কে বলেন, পচাঁবাসী অপরিচ্ছন্ন তেঁতুল খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। এসব তেঁতুল মিশ্রিত খাবার খেলে মানুষের নানা প্রকারের রোগ ব্যাধী হতে পারে বিশেষ করে ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি বেশি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনা করে এই ব্যাপারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিবো।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন সকালের-সময়কে বলেন, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা আইন মানতে হবে। ইতিপূর্বে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেঁতুল জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে। তবে তেঁতুল ব্যবসায়ীদের অভ্যাস বদলায়নি। বিষয়টি নিয়ে আবার ও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা সহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ