কে এই অনিয়ম-দুর্নীতির কারিগর মামুন মিয়া!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৯ জুলাই, ২০২১ ১২:১০ : পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলাদা রেলওয়ে মন্ত্রণালয় করা হলেও এতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি বাংলাদেশ রেলওয়ের। সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসেবে মানুষ রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। লাগামহীন চুরি ও দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত রেল বিভাগের এ নিয়ে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।

বস্তুত রেল কর্তৃপক্ষ গণমানুষের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি, বরং প্রতি বছর রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা।

বর্তমান রেলমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ রেলওয়েকে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য বার বার চেষ্টা করেও বিফলে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল রেলের বাণিজ্যিক শাখার কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে রেল।

জানা য়ায়, পূর্বাঞ্চল রেলের টেন্ডার, ইজারা, ক্যাটারিং, রাজস্ব আদায়ে কয়েকজন দুর্নীতিবাজ মূল হোতার মধ্য বাণিজ্যিক শাখার মামুন মিয়া অন্যতম। এই শাখার (সিসিএম) নাজমুল ইসলামের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন কাজের ৫ থেকে ১০℅ কমিশন হাতিয়ে নেয় মামুন মিয়া।

সূত্র জানায়, চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এর বিশেষ জামায় আদরে রয়েছেন এই মামুন মিয়া। পূর্বাঞ্চল রেলের এই শাখার বিভিন্ন কাজের অনিয়ম-দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য এই মামুন মিয়ার হাত দিয়েই করে থাকেন খোদ সিসিএম নিজেই। ইতিপূর্বে এই শাখার অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে কর্মচারী অলিউল্লাহ সুমন দুদকের মামলায় জেলে গেলেও বর্তমানে রেল অঙ্গনের আলোচিত দুর্নীতিবাজ মামুন মিয়া রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব দ্রুত আদায়ের জন্য মন্ত্রীর নির্দেশে পরিপত্র জারি করা হলেও বাণিজ্যিক বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে ত্বরান্বিত হচ্ছে না রাজস্ব আদায়। দীর্ঘদিন বাণিজ্যিক শাখার সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। এই শাখার বেআইনি সকল কর্মকাণ্ডে অবৈধ লেনদেনের সুবিধা ভোগ করেন সিসিএমসহ এই মামুন মিয়া। এই কারণেই তিনি পূর্বাঞ্চল রেল ছাড়তে একেবারেই নারাজ।

সূত্র আরো জানায়, দুর্নীতিবাজ মামুন মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ বাণিজ্যিক শাখায় নয় তারা আধিপত্য বিস্তার করে পুরো পূর্বাঞ্চল রেল ঘিরে। তিনি প্রতিটি দপ্তরকে জিম্মি করে রেখেছেন নিজস্ব বলয়ে। তিনি বরিশাল সিন্ডিকেট নামে একটি সিন্ডিকেটও গড়ে তোলেছেন পূর্বাঞ্চল রেলে। তার আধিপত্য নিয়ে খোদ রেল অঙ্গনে শুনা যাচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। তার এই প্রকাশ্য অপকর্ম দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকলেও নিরব ভূমিকায় রয়েছেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।

বাণিজ্যিক শাখার প্রধান অফিস সহকারীর দায়িত্বে থাকায় ইজারা, ক্যাটারিং, রাজস্ব আদায়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন এই মামুন মিয়া। শুধু ঠিকাদার নয় রেলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়মবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার কারণে প্রতি বছর রেলের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের সাথে রয়েছে মামুন মিয়ার ঘনিষ্ঠ সখ্যতা, ঠিকাদারদের সাথে বিল বাণিজ্যও করে থাকেন তিনি। বিলের একটি অংশ মামুন মিয়াকে দিলেই ঠিকাদারদের আর বিলের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। নিমিষেই তার ঊর্ধ্বতন স্যারদেরকে ম্যানেস করে বিল আদায় করেন তিনি।

বছরের পর বছর পূর্বাঞ্চল রেল রাজত্ব করা মামুন মিয়ার এক মাত্র নেশা কমিশন বাণিজ্য, তার এই নেশার কথাই নাকি সবাই মানতে বাধ্য! অবাক করা বিষয় হল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার ইচ্ছার বাহিরে যেতে পারেন না। বিভিন্ন খাতের অনিয়ম—দুর্নীতি যেন তার ইশারায় চলে।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য মামুন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অধিনস্থ মিডিয়ার লোকজন দিয়ে নিউজ আটকানোর চেষ্টা করেন। এবং প্রতিবেদকে নিউজ করলে সমস্যা হবে বলেও হুমকি প্রদান করেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য পূর্বাঞ্চল রেলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) নাজমুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

প্রিয় পাঠক, আগামী পর্বে মামুন মিয়াসহ বাণিজ্যক শাখার আরো কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিউজ প্রকাশ করা হবে সঙ্গে থাকুন। 

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ