আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, যেন সুবিশাল বটগাছ!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১৭ জুন, ২০২১ ৯:৫৪ : পূর্বাহ্ণ

দশ বছর আগে ‘নুন আনতে পানতা ফুরাত’ হাসান মোহাম্মদ রাশেদের, সামান্য বেতনের চাকুরী করে জীবন চলতো তার। কিন্তু তিনি এখন রাউজানের নব্য কোটিপতি। তার চালচলনে এখন বেশ রাজকীয়তা, হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ নয়, যেন সুবিশাল বটগাছ বনার রহস্য নিয়ে খোদ এলাকাবাসীর মাঝে চলছে কানাঘুষা।

রাশেদ এখন এলাকার বড় ধনী, বড় দানবীর। থাকেন বিলাসবহুল বাড়িতে। চড়েন দামি গাড়িতে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়েছে তার অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক উত্থান। যে উত্থানকাহিনি শুনে ‘চক্ষু চড়কগাছ’ হবে যে কারও।

বলছি—হাসান মোহাম্মদ রাশেদের কথা। বয়স প্রায় ৪০। বাড়ি রাউজান উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকায়। ৮ বছর আগে চাকুরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেতন পান ২০-২৫ হাজার টাকা। অল্প বেতনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও তার চলাফেরায় আভিজাত্যের ছাপ।

শহরের কর্মস্থলে আসতে একসময় বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম-রামগড় সড়কে আসতেন সাইকেল চালিয়ে। সেখান থেকে বাসে চড়ে আসতেন শহরের বায়েজিদ এলাকার কর্মস্থলে। কিন্তু এখন সবই আছে। শহরের তার আছে বাড়ি, গাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাটসহ কোটি কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি।

আর এসবই হয়েছে তার ‘ঠিকাদারী’ ব্যবসার বদৌলতে। রাশেদ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও করেন ঠিকাদারী ব্যবসা। সরকারি দলের সংগঠনে কোনো পদে না থাকলেও সখ্যতা রাখেন হাইব্রিড নেতাদের সাথে।

তার বিরুদ্ধে দুদকসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে অভিযোগ দিয়েছেন আবদুল হাকিম নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ, গত দুই বছরে তার প্রতিষ্ঠান ‘মাজেদা এন্টারপ্রাইজ’ রাউজান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্কুল, সেতু ও রাস্তাসহ ৫০ কোটি টাকার অন্তত ৩০টি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন।

অভিযোগ আছে, এসব প্রকল্পের বেশিরভাগেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সম্পন্ন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিল ছাড়িয়ে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রামের উপপরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে অনেক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ দুদকে জমা পড়ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গত দুই বছরে রাশেদের ‘মাজেদা এন্টারপ্রাইজ’ ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাউজান মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প, ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ছালামত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প, ৪ কোটি টাকার হলদিয়া আলী খিল ব্রিজ প্রকল্প, ৩ কোটি টাকার রাউজান কদলপুর শফি কোম্পানি বাড়ি সড়ক, ৩ কোটি টাকার নোয়াপাড়া ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আঁধারমানিক উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার ৩০টি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়-এসব প্রকল্পে বেশিরভাগের কাজ হয়েছে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে। প্রকল্পগুলোয় নয়-ছয় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত হাসান মোহাম্মদ রাশেদ।

জানা গেছে, প্রায় ৮ বছর আগে চট্টগ্রামে রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়েজিদ স্টিল মিল লিমিটেডে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন হাসান মোহাম্মদ রাশেদ। স্নাতক ডিগ্রিধারী রাশেদ একসময় গ্রামের বাড়ি মোহাম্মদপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে ‘মদের মায়াল’ (জায়গার নাম) আসতেন। সেখান থেকে বাসে চড়ে চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ এলাকার কর্মস্থলে আসতেন। কাজ শেষে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতেন একইভাবে।

বছর দুয়েক আগে ‘মাজেদা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন রাশেদ। এক সময় যাদের ঘরে নুন আনতে ফান্তা ফুরানোর অবস্থা ছিল এখন সেই রাশেদের হঠাৎ উত্থান নিয়ে বিস্ময় আছে এলাকাজুড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ রোডের কয়লার ঘর গুলবাগ আবাসিক এলাকায় ‘সেভেন মুক্তাদির টাওয়ার’ নামে একটি বহুতল ভবনে তার আছে একধিক ফ্ল্যাট। ক্যান্টনমেন্ট ও বালুছড়া এলাকায় আছে দুটি ফ্ল্যাট বাড়ি।

হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার সিদ্দিক আহমদ বাড়ির বাহাদুর আলম ও ইলিয়াস জাভেদ থেকে সম্প্রতি রাশেদ কিনেছেন বিশালকার জমি। রাউজান পৌরসভার চারা বটতল এলাকায় তার আছে বড় একটি জায়গা। উপজেলা সদর এলাকায় অবস্থিত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনাশিপও আছে তার।

এই বিষয়ে জানার জন্য হাসান মোহাম্মদ রাশেদের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি সকালের-সময়কে জানান, আমি অসুস্থ, আমি আপনার সাথে পরে কথা বলব বলে লাইন কেটে দেন।

প্রিয় পাঠক, রাশেদের আরো অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য জানতে আগামী পর্বে চোঁখ রাখুন.. 

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ