ধার করা বই পড়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাদারীপুরের কাকলী।


২৩ জুলাই, ২০১৮ ১:৪৮ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় মাদারীপুর প্রতিনিধি:: মাদারীপুর জেলার,শিবচর উপজেলার,পাঁচ্চর ২ নং ওয়ার্ডের, হারুন মাদবর (দিনমজুর) এর মেয়ে কাকলী আক্তার ধার করা বই পড়ে অর্জন করেছে (জিপিএ-৫) খুব খারাপ অবস্থার মদ্ধে, নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করেছে (জিপিএ-৫) অন্য অভিভাবকরা যখন তাদের সন্তানের ফলাফল নিয়ে আনন্দ করছেন তখন এই দিনমজুরের কপালে দেখা যায় চিন্তার রেখা। মেয়ে এতো ভালো রেজাল্ট করলেও মিষ্টি কেনার টাকা নেই এই দিনমজুরের। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফেরার পথে মসজিদের মিলাদে দেয়া একপিস জেলাপি নিয়ে মেধাবী মেয়েকে মিষ্টি মুখ করান এই বাবা।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী কাকলী আক্তারের পরিবারটিতে কোন আনন্দ নেই। উল্টো দেখা গেলো মা-মেয়ের চোখে পানি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় তারা। কলেজের সহযোগিতায় বিনা খরচে লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ অর্জন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির বদলে চরম হতাশায় নিমজ্জিত কাকলীর পরিবার। এখন লেখাপড়া চালানো নিয়েই শঙ্কা।

চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার ৫ টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ণ হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে এবং উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনধারী ওই কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার। দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙ্গনে আক্রান্ত কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটির বসবাস উপজেলার পাচ্চরে একচালার একটি খুপড়ি ঘরে। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর মা তাসলিমা বেগম গৃহিণী। অন্যের জমিতে বাবা হারুনের কামলা (দিনমজুরি) দিয়েই চলে সংসার। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ অর্জন করে।

পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ দেন। এমনকি বেতনসহ যাবতীয় খরচ বিনামূল্য করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যাতায়াতসহ বাকি খরচ চালাতে পাশের বাড়ির শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেই চালাতো নিজের খরচ। দিনমজুর বাবা খাবার জোগাতেই হিমশিম খাওয়ায় টাকার অভাবে কলেজের মাত্র ৪টি বই কিনতে পারে কাকলী। অন্যের পুরাতন বই হাওলাদ করে পড়তে হয়েছে তাকে। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের বেলাকেই বেশি বেছে নিতো পড়ার সময়। খাতা ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়তো বেশি লিখতো কম। যাতায়াত ভাড়া না থাকায় অনেকদিন কলেজে যাওয়া বাদ দিতে হয়েছে তাকে।

কাকলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, একচালার এক জরাজীর্ণ টিনের ঘরে ৫ ভাইবোনসহ পরিবারটির বসবাস। প্রতিবন্ধী বাবা বাড়ি নেই ভোরে বের হয়ে গেছে দিনমজুরির কাজে। ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে মাসহ কাকলী লুকানোর চেষ্টা করে চাপা কান্না। একপর্যায়ে সরল স্বীকারোক্তি অর্থাভাবে প্রস্তুতি তো দূরে থাক এখনো চিন্তাতেই আনেনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতির কথা। মেয়ের এত ভাল ফলাফলের পরেও টাকার অভাবে মিষ্টিও কিনে খেতে পারেনি তারা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে দেখা যায় কাকলীর বাবা কাজ শেষে খুড়িয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে হাতে এক পিচ জিলাপী নিয়ে। গতকাল মসজিদ থেকে দেয়া ওই জিলাপীটাই বাবা না খেয়ে এনেছিল মেয়ের ভাল ফলাফলের জন্য।

পাশের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, এমন পরিবেশে থেকে কাকলীর এই ফলাফল সত্যিই অবিশ্বাস্য। এত ভাল রেজাল্ট করেও ওদের বাড়িতে আনন্দ নেই। ভাল জায়গায় ভর্তিতো দূরে থাক। ওদের অন্য কোথাও যাওয়ার ভাড়াও নেই। কাকলীর মা(তাসলিমা বেগম) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কামলা দিয়ে ৭ জনের সংসার চালানোই কঠিন। রেজাল্টের পর মিষ্টিও খাওয়াতে পারি নাই মেয়েকে। ভাত জুটানোই কষ্ট। আমাগো সামর্থ্য নাই ওরে পড়ানোর। ও নিজে কষ্ট কইরা এই পর্যন্ত আইছে। বাবা হারুন মাদবর বলেন, একদিন কাজ না করলে সংসারই চলে না৷ ও পড়ছে নিজেরডা দিয়াই৷ এহন ভাল জায়গায় পড়তে চায়। আমরা কেমনে কি করমু।

অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তার বলেন, কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করেই পড়ছি। উচ্চশিক্ষা নেয়ার আমার খুব ইচ্ছা। কিন্তু আমার মা-বাবাতো পারে না। তাই জানি না কি আছে ভাগ্যে। তবে আমি পড়তে চাই। পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম বলেন, ‘কাকলী অদম্য মেধাবীদের মধ্যেও সেরা। ও এই উপজেলার এবারের একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। ওর পাশে সরকারসহ বিত্তবানরা এগিয়ে না আসলে ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তাই আসুন আমরা সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই এই কাকলীর জন্য।

পরিবারের নাম্বার ০১৯৮৮৩৭১৬৫৮ অথবা অধ্যক্ষের নাম্বারে ০১৭১৬৩৭৭২৯৬ যোগাযোগ করতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ