কোটা আন্দোলনকারীদের ৩ নেতাকে চোখ বেঁধে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার অভিযোগ


১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ৬:৩২ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:: সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা দাবি করেছেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাদের চোখ বেঁধে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনাকে ‘অপহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করে সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নূর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা ন্যায়ের পথে আন্দোলন করেছি, কিন্তু পুলিশ আমাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে আমাদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।

এই আন্দোলনকারীরা সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও উপাচর্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা সব মামলা দুই দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না করলে তারা আবার রাজপথে নামবেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পরিষদের তিন যুগ্ম আহবায়ক নূরুল হক নূর, ফারুক হাসান, মুহম্মদ রাশেদ খানকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

পরে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন সকালেরসময়কে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ‘সহিংসতার’ ঘটনায় যেসব তথ্য উপাত্ত পুলিশ পেয়েছে, সেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য ওই তিনজনকে তারা ‘ডেকে নিয়ে’ গিয়েছিলেন।

ভিসির বাসায় যে হামলা হয়েছিল, এই ঘটনায় যেসব ভিভিও ফুটেজ পেয়েছি সেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য তদন্তের প্রয়োজনে তাদের ডেকে এনেছিলাম। তারা চলেও গেছে।

ডিবি অফিস ঘুরে এসে দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে আবার সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন আন্দোলনের নেতারা। সেখানে জানানো হয়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ‘ধরে নিয়ে যায়’ ডিবি পুলিশ।

যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নূর বলেন, আমরা মেডিকেলে ভর্তি শিক্ষার্থীদের দেখে যাওয়ার সময় জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ৩/৪টি মোটর সাইকেল এবং দুটো কালো কাচওয়ালা মাইক্রোবাস সেখানে আসে। রিকশা থামিয়ে টানা-হেঁচড়া করে তারা আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে ফেলে।

নূর বলছেন, মাইক্রোবাসে তোলার পর প্রথমে তাদের হেলমেট পরিয়ে দেওয়া হয়। গুলিস্তান এলাকায় নিয়ে ‘গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে’ ফেলা হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে চোখ খোলার পর তারা বুঝতে পারেন, তারা আছেন ডিবি কার্যালয়ে। পুলিশ আমাদের বলেছে, কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানোর জন্য তারা আমাদের তুলে নিয়েছে। পরে তারা আমাদের কিছুই দেখায়নি। নাম জিজ্ঞেস করে, দরকার হলে পরে ডাকা হবে বলে ছেড়ে দিয়েছে।

ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আরেক যুগ্ম আহবায়ক মুহম্মদ রাশেদ খান বলেন, আমার বাবাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ঝিনাইদহ সদর থানায় আমার বাবাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমার দিনমজুর বাবাকে থানায় আটকে রেখে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। আমার শিবির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের জন্য তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, আমার পদ-পদবি নেই, তাই বলে কি আমি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পারব না? আমার বাবার কি অপরাধ ছিল?

সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাশেদ জানান, তার বাবার নাম মোহাম্মদ সবাই বিশ্বাস। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ সকালেরসময়কে বলেন, ইত্তেফাকে আজ একটা খবর এসেছে যে ঢাকার কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ শিবিরের সক্রিয় কর্মী। এ বিষয়ে তার বাবাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের।

রাতভর ওই সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে প্রায় সব কিছু ভাঙচুর করা হয়। টানা আন্দোলনের মধ্যে ১১ এপ্রিল সারা দেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নামে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের অবরোধে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানীর রাজপথ।

সেদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে এই আন্দোলন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না।নপরদিন দ্রুত কোটা সংস্কারের গেজেট প্রকাশসহ কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page