মুসলিমদের শত শত মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে চীন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ৪:৪৭ : অপরাহ্ণ

চীনের উত্তরাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত নিংজিয়া ও গানসু অঞ্চলে শত শত মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘চীনাকরণ’ করার অংশ হিসেবে মসজিদগুলো বন্ধ করছে দেশটি। একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার (২২ নভেম্বর) এই খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’।

চীনে জিনজিয়াংয়ের পর মুসলিম অধ্যুষিত স্থান হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলীয় নিংজিয়া ও গানসু অঞ্চল। সেখানে মুসলমানদের উপাসনার জন্য অসংখ্য মসজিদ ছিল। তবে অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্যহারে কমছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউএ) বলছে, সংখ্যালঘুদের চীনাকরণ করার অংশ হিসেবে মসজিদগুলো বন্ধ করছে চীনা সরকার।

গার্ডিয়ান বলছে, ঠিক কতগুলো মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি এইচআরডব্লিউ। উপগ্রহের ছবি পরীক্ষা করে সংস্থাটির গবেষকরা জানিয়েছেন, নিংজিয়ার দুটি গ্রামে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাতটি মসজিদের মিনার ও গম্বুজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে চারটি মসজিদকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই চার মসজিদের মধ্যে আবার তিনটির প্রধান ভবন ধ্বংস করা হয়েছে এবং অপরটির অজু করার স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব প্লাইমাউথের লেকচারার হান্নাহ থিয়েকার বলেন, অজু করার স্থান না থাকলে সাধারণত আপনি উপসনালয় ব্যবহার করতে পারবেন না। এর মানে, উপাসনার স্থান কৌশলগতভাবে অপসারণ করা হচ্ছে।

একটি সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া এসব মসজিদের সংখ্যা শত শত। নিংজিয়া প্রদেশের ঝোংওয়েই শহরে ১০ লাখের বেশি মানষের বসবাস। ২০১৯ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো, সেখানে তারা ২১৪টি মসজিদের স্থান পরিবর্তন, ৩৭টি নিষিদ্ধ ও ৫৮টি মসজিদ একত্রিত করেছে।

হান্না থিয়েকার ও ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গবেষক ডেভিড স্ট্রপ জানান, নিংজিয়ায় প্রায় এক হাজার ৩০০ মসজিদ ছিল। ২০২০ সাল থেকে এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বন্ধ হয়ে গেছে।

মসজিদ একত্রীকরণ বিষয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিংজিয়ার এক ইমাম বলেন, ‘আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে দুটি মসজিদ থাকলে সেগুলো এক করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদগুলো বন্ধ হওয়ায় অনেক তরুণ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিরা ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবেই মুসলিমদের চীনাকরণ ঘটবে।

এ বিষয়ে চীনের এইচআরডব্লিউ’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মায়া ওয়াং বলেন, ‘ইসলামের অনুশীলনকে রোধ করতে মসজিদ বন্ধ ও ধ্বংস করা চীনা সরকারের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টার অংশ।

মসজিদ বন্ধ করার পেছনে উদ্দেশ্য

২০১৬ সালে ধর্মকে চীনাকরণের আহ্বান জানিয়েছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর থেকেই চীনের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর কঠোর চাপ বজায় রেখেছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)।

২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনা সরকার ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে এসব স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে ‘বেশি ধ্বংস এবং কম নির্মাণ নীতি’ মেনে চলা শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ান থিংকট্যাংক দ্য অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে জিনজিয়াংয়ের ১৬ হাজার মসজিদের ৬৫ শতাংশই ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চীনা সরকার যা বললো

চীন সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, আইন অনুযায়ী, চীনের সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করে এমন নীতি অনুসরণের মাধ্যমে চীন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আইন অনুযায়ী ধর্মীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করে। আমরা ধর্মীয় উগ্রবাদ বর্জন এবং এর বিপক্ষে লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আইন অনুসারে ধর্মপ্রাণ মানুষদের স্বাভাবিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিশ্চিত এবং তাদের রীতিনীতির সম্মান করে চীন।

গার্ডিয়ান আরও জানায়, মসজিদ একত্রীকরণ নীতি শুধু নিংজিয়া এবং গানসু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট এর ধারণা, ২০১৭ সাল থেকে জিনজিয়াংয়ের ১৬ হাজার মসজিদের ৬৫ শতাংশই ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের মে মাসে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের একটি শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়ে হুই মুসলিমরা। একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ