তুরস্কে ভবন নির্মাণে অনিয়ম- ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:৩০ : অপরাহ্ণ

৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালি ভূমিকম্পের ১৪০ ঘন্টা পার হলেও তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। দুই দেশে এখনও পর্যন্ত ২৯ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের সময় হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে, নির্মাণ ব্যর্থতার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব আরও খারাপ হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবারের ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবন নির্মাণের ঘটনায় ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পুলিশ ইতিমধ্যেই নির্মাণ ঠিকাদারসহ অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদের খোঁজে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে এই পদক্ষেপটিকে অনেকেই দুর্যোগের জন্য সামগ্রিক দোষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হিসাবে দেখবেন।

বছরের পর বছর ধরে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন,তুরস্কের অনেক নতুন ভবন স্থানীয় দুর্নীতি এবং সরকারী নীতির কারণে অনিরাপদ। এই নীতিগুলি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলগুলো সহ নির্মাণের প্রবণতাকে উত্সাহিত করার জন্য বিল্ডিং প্রবিধানগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের জন্য তথাকথিত সাধারণ ক্ষমার অনুমতি দেয়। 

ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কে একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, এরই মধ্যে আবার লুটপাট শুরু হয়েছে। ভূমিকম্পের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে লুটপাটকারীরা বাড়িঘর এবং শপিংমলের দরজা জানালা ভেঙে যা পাচ্ছেন, নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে লুটপাটের ঘটনায় গোলাগুলিও হয়েছে। রোববার এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ইতোমধ্যে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আটটি প্রদেশ থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটতরাজসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে ব্যাংক নোট, গহনা, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।

পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেকে দোকান থেকে শিশু খাদ্য লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকে আমাদের ঘরবাড়িতে ঢুকে সামনে যা পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি লুটপাটের হাত থেকে আমাদের গাড়িও রক্ষা পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ লুটপাটে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে সহায়তা করবে। তিন মাসের জরুরি অবস্থার বিষয়ে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, জরুরি অবস্থা ঋণদাতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পরবর্তী শোষণ থেকে বিরত রাখবে।

এছাড়াও রোববার কয়েকটি উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, গত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দক্ষিণ তুরস্কে সংঘর্ষের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। এখন জীবিত আছেন এমন কাউকে উদ্ধারের ব্যাপারে অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা।

জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় শনিবার অনুসন্ধান অভিযান স্থগিত করেছে বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও সংঘর্ষের কারণ জানাননি উদ্ধারকারীরা।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ