সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করলেও তা চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে।


১৯ জুলাই, ২০১৮ ১:১২ : পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ ফোরকান:: বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করতে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় আহরণের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করলেও এখন তা চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে। ব্যাংকের তুলনায় সুদ বেশি হওয়ায় সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সঞ্চয়পত্র কিনতে।মসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে ৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো দিন বিক্রির পরিমাণ ১০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, এক সময় সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া সুদে অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের সংসার চললেও এখন সব শ্রেণি পেশার মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আর নতুন করে সুদের হার কমায় ব্যাংকের স্থায়ী আমানত ভেঙে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণে প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে অনেক গ্রাহক। সেখানে কথা হয়, দুবাই ফেরত নজরুলের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) সুদ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমতে কমতে এখন ৬ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। এই টাকায় এখন সংসার চলে না, তাই এফডিআর ভেঙে সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছি। আমানতের সুদহার কমার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে আমার মতো মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত চার বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। স্থায়ী আমানতের সুদের হার এখন ৬ শতাংশ। বিভিন্ন মেয়াদে সঞ্চয়পত্রের জন্য ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। আর এ কারণে বেশি আমানতের আশায় প্রতিদিনই মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে।

সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাসুমা আক্তার সকালেরসময়কে বলেন, সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে সব সময় সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তবে জুলাই মাসের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের ভিড় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সকালেরসময়কে বলেন, সুদের হার কমিয়ে আমানত ধরে রাখতে পারবে না ব্যাংকগুলো। স্থায়ী আমানতের জন্য বেশি সুদ না দিলে সব আমানত সঞ্চয়পত্রে চলে যাবে। স্থায়ী আমানত ধরে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে আলাদা সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলেও পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকায়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৪২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসেই বিক্রি হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। কোনো কোনো দিন তা ১০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হচ্ছে চার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর সহকারী পরিচালক ফরহাদ হাসান বলেন, সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বাড়ার কারণে আমরা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি।

সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়ায় কমানো সুদহার বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা করেছেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সকালেরসময়কে বলেন, সুদহার যতই কমানো হোক, আমানত চলে গেলে তা বাস্তবায়ন করতে পারবো না। তবে সঞ্চয়পত্রের প্রতি ঝোঁক ঠেকাতে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ব্যাংকগুলোতে একটি আলাদা ডিপোজিট রেট (সুদহার) বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন এবিবি প্রধান।হাসান বলেন, সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বাড়ার কারণে আমরা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি।

সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়ায় কমানো সুদহার বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা করেছেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সকালেরসময়কে তিনি বলেন, সুদহার যতই কমানো হোক, আমানত চলে গেলে তা বাস্তবায়ন করতে পারবো না। তবে সঞ্চয়পত্রের প্রতি ঝোঁক ঠেকাতে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ব্যাংকগুলোতে একটি আলাদা ডিপোজিট রেট (সুদহার) বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন এবিবি প্রধান।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ