কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের হুমকি!


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ৮:৫৭ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ সারা দেশের কাস্টমস হাউসে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধন, সিপিসি ও এইচএসকোড সংক্রান্ত ভুলের কারণে শতকরা ২০০ থেকে ৪০০ ভাগ জরিমানা রহিতসহ বিভিন্ন দাবি মানা না হলে ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সারা দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে দুই দিন কর্মবিরতি পালন করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো এক চিঠিতে এ হুমকি দিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকার নিউ বেইলি রোডের সংগঠনের কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব সুলতান হোসেন খানের সঞ্চালনায় সভায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, মোংলা, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলি, ভোমরাসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ জারির পর ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বারবার প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এরপর কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ প্রণয়নের সময়ও ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গুরুত্ব না দিয়েই বিধি জারি করা হয়েছিল।

দেশের সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হলেও বাজেট প্রস্তাবনায় কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।

এ বিষয়ে গত বছরের ২৮ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব এ কে এম নূরুল হুদা আজাদের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০-এর কিছু ধারা সংশোধনের বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলেও অদ্যাবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সংশোধনী প্রস্তাবে জানানো হয়, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এইচএস কোড ও সিপিসি ভুলের কারণে জরিমানা আরোপ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ ও বিধি-বিধান বাতিল করতে হবে।

অযৌক্তিক কারণে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে লাইসেন্সিং বিধিমালা ও কাস্টমস আইন ১৯৬৯-এর ধারা ২০৯ মোতাবেক কাজ না করে এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ বা শুনানির সুযোগ না দিয়েই এআইএন লক করা বা লাইসেন্স বাতিল করা বা কোনো দোষ প্রমাণিত না হলেও জরিমানা আরোপের মতো নিবর্তনমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। আমদানিকারকদের কাছে পাওনা অনাদায়ি থাকার কারণে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত রাখা যাবে না।

সংশোধনী প্রস্তাবে আরো জানানো হয়, আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালান খালাসকালে কায়িক পরীক্ষা সম্পাদিত হয়নি অথবা প্রথমবার কায়িক পরীক্ষা সম্পাদনকালে কোনো পণ্য চালানে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে না। শুধু আমদানিকারক ও শিপিং এজেন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ উত্থাপন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

ফেডারেশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, লাইসেন্সিং রুলের বাধ্যবাধকতার কারণে সিএন্ডএফ এজেন্টরা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করে থাকেন। জনগণের রাজস্বের টাকায় শুল্ক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু তারা আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন।

তিনি বলেন, বর্তমান লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধন ব্যতীত আমাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। শুল্ক বিভাগের নিযুক্ত সহকারি রাজস্ব অফিসার (এআরও), রাজস্ব অফিসার (আরও), সহকারী কমিশনার (এসি), উপকমিশনারগণের (ডিসি) আচরণ খুবই বিদ্বেষপূর্ণ।

বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এটা সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান আছে বলে তাদের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে না। আমরা ব্যাবসায়িক পরিমণ্ডলে চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছি। এইচএস কোড, সিপিসি আলোচনার বিষয় কিন্তু শুল্ক কর্তৃপক্ষ শতকরা ২০০-৪০০ ভাগ জরিমানা করতে বেশি আগ্রহী।

রাজস্ব আহরণ নির্বিঘ্নে রাখার স্বার্থে এনবিআরকে দ্রুতই এ দাবিগুলো নিয়ে যৌথ সভা আহ্বান করে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। এর আগেও দাবি না মানায় গত বছরের ৭ জুন সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছিল ফেডারেশনের আওতাভুক্ত সকল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

আর এদিকে—২৮ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানা না হলে ৩০-৩১ জানুয়ারি দুই দিন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সদস্যদের চিঠি দিয়ে কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) সাংবাদিকদের বলেন, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কিছু বিধিবিধান সংশোধন, পণ্য চালান শুল্কায়নকালে পণ্যের এইচএস কোড ও সিপিসি নির্ধারণে প্রণীত বিভিন্ন বিতর্কিত আদেশ বাতিলের দাবিতে সারা দেশের কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে একযোগে এ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। এসব দাবিতে দীর্ঘদিন আমরা আন্দোলন করে আসছি।

দাবি পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আশানুরূপ পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় শনিবার (২১ জানুয়ারি) ফেডারেশনের জরুরি সভায় দুই দিন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, শনিবারের (২৮ জানুয়ারি) মধ্যে লাইসেন্সিং বিধিমালার কিছু বিধিবিধান সংশোধন, এইচএস কোড ও সিপিসি ভুলের কারণে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ বাতিল বিষয়ে ফেডারেশনের প্রস্তাবনা অনুসারে সংশোধন করা না হলে কর্মবিরতি পালন করা হবে। এ বিষয়ে ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করবে ফেডারেশন।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ