গাজায় ইসরাইলি হামলায় দৈনিক ১৬০ শিশুর মৃত্যু–ডব্লিউএইচও


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ৯:৪৮ : পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিধ্বংসী আগ্রাসনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। বর্বর এ হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের প্রায় অর্ধেকই শিশু। প্রতিদিন গড়ে ১৬০ শিশু নিহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘শিশুদের গোরস্তানে পরিণত হচ্ছে গাজা।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তা ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রতিদিন গাজায় গড়ে প্রায় ১৬০ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজায় এক মাস ধরে ইসরায়েলি হামলা চলছে। সেখানকার দুর্ভোগ কমাতে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন।

তিনি বলেন, গাজায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। যারা বেঁচে আছে; তারা বিভিন্ন শঙ্কায় আছেন। গাজার মানুষ খাবার ও পানির অভাবে ভুগছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য পানি, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন।

গুতেরেস বলেন, যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী একসঙ্গে বেসামরিক নাগরিক, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা এবং জাতিসংঘের স্থাপনার ওপর বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। গাজায় এখন আর কেউ নিরাপদ নয়।

গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ৮৯ কর্মী ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার হয়েছেন জানিয়ে গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের ইতিহাসে আর কখনও কোনো যুদ্ধে এত বেশি সংখ্যক কর্মী নিহত হননি। গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে এই নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও যন্ত্রণাদায়ক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায় খুজে বের করতে হবে।

যুদ্ধের আগে যেখানে গাজায় প্রতিদিন পণ্যবাহী ৫০০ ট্রাক ঢুকত; সেখানে গত দু’সপ্তাহে সব মিলে মাত্র ৪০০ ট্রাক প্রবেশ করেছে। শুধুমাত্র রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজাবাসীর সমুদ্রসম প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব নয়। ইসরায়েলের অন্যান্য ক্রসিং খুলে দিয়ে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ব্যাপকভাবে ত্রাণ সরবরাহ করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩২৮ জন। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চার হাজার ২৩৭ জনই শিশু। এর আগে সোমবার গাজা সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সেখানকার মিডিয়া অফিসের মুখপাত্র সালামা মারুফ বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণে ১৯২টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৬টি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ১৯২টি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩২টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। ১১৩টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং ১৬টি হাসপাতাল ও ৩২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের সেবা দেওয়া বন্ধ করেছে।

সালামা মারুফ বলেন, ইসরায়েলি হামলায় প্রায় দুই লাখ ২২ হাজার আবাসিক ইউনিট (ফ্লাট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১০ হাজার ভবন সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ৪০ হাজার আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে।

সূত্র—আল-জাজিরা, বিবিসি।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page