অর্থ আত্মসাৎ–গ্রামীণ টেলিকমের ১১ নথি দুদকে


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৭ আগস্ট, ২০২২ ১:২৭ : পূর্বাহ্ণ

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত ১১ ধরনের নথিপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৌঁছেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কয়েক দফায় ওইসব নথিপত্র এসেছে। মঙ্গলবার দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত ১ আগস্ট দুদকের অনুসন্ধান টিমের প্রধান ও উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা নোটিশে নথিপত্র চাওয়া হয়।

গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো নোটিশে যেসব নথিপত্র তলব করেছিল, সেগুলো হলো গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির ১৯৯৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের বিস্তারিত তথ্য, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি পরিচালনার আইন ও বিধিসমূহ এবং গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা-সংক্রান্ত নথিপত্র।

পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের এ কোম্পানি থেকে ঋণ পাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে কি না, বা এ পর্যন্ত পর্ষদের কোন কোন সদস্য কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং ঋণের অর্থ কীভাবে উত্তোলন করেছেন, সে-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি।

গ্রামীণফোন কোম্পানিতে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির কত শেয়ার রয়েছে ও কার নামে শেয়ার রয়েছে, এসব তথ্য চাওয়া হয়। আরও চাওয়া হয়, শেয়ারের বিপরীতে ১৯৯৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে, ওই লভ্যাংশের অর্থ কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করেছেÑএর বছরভিত্তিক তথ্যাদির ছকসহ রেকর্ডপত্র।

১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক কতগুলো বোর্ড সভা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতি সম্মানী কত এবং এতৎসংক্রান্ত সমুদয় বোর্ড সভায় রেজ্যুলেশনের সত্যায়িত কপি।

২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কত এবং ওই লভ্যাংশ থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য প্রযোজ্য শতাংশ এ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের ফটোকপি। এছাড়া অর্থ কাকে, কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তার বিবরণ।

১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বাবদ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার পরিমাণ কত, তা থেকে কত প্রকার ফি কীভাবে কর্তন করা হয়েছে, সে-সংক্রান্ত তথ্যাদি বা রেকর্ডপত্রের ফটোকপি।

১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কত, তার বিতরণ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের কপি বা তথ্যাদি, কোম্পানির কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত ওই অর্থ স্থানান্তর করা না হলে ওই অর্থ কোথায়, কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে ইত্যাদির নথিপত্র, কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে কাউকে ঋণ ও অনুদান বা অন্য কোনোভাবে দেয়া হয়েছে কি না, হলে তার বিস্তারিত তথ্য ছক।

১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা ড. ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর-সংক্রান্ত নথিপত্র, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি থেকে ওই অর্থ কোথায়, কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে কি না, এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র।

এর আগে অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। টিমে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী। গত ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page