ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৮০ হাজার ছাড়ালো


নিউজ ডেস্ক  ১১ আগস্ট, ২০২৩ ৯:১৭ : অপরাহ্ণ

চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে ক্রমেই রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেক হাসপাতালে কোন শয্যাই ফাঁকা নেই। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে সবাই আতঙ্কে আছে। শুক্রবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জন মারা গেছেন। এনিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৭৩ জনে।

গত বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গিয়েছিল ২৮১ জন। যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৬ জন। তাতে এবছরে মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ হাজার ৭৪ জনে দাঁড়ালো। এর মধ্যে চলতি মাসের ১১ দিনে ১২২ জনের মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮ হাজার ২৪২ জন। এদিকে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকার মারা গেছেন।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৬৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৪২১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ২৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৪৩০ জন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এর পরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৭০ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ২৮০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ২১৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৬৫ জন, কুর্মিটোলা জেলারেল হাসপাতালে ১৬২ জন এবং পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১১৬ জন এবং ভর্তি রয়েছেন।

অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল চলতি বছরে ডেঙ্গু-আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছেন ৮০ হাজার ৭৪ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪০ হাজার ৭৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৯ হাজার ৩১০ জন। আক্রান্ত মোট রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ।

আর চলতি বছরে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭০ হাজার ২৬ জন। এছাড়া চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারি মাসে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক শরিফা বিনতে আজিজ আঁখি (২৭) মারা গেছেন। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নাজমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন ডা. শরিফা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট টু করছিলেন এবং হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে দায়িত্ব (ডিউটি) পালন করতেন।

জানা গেছে, ডা. শরিফার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার দোহারের জয়পাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ। এক ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল বড়। চিকিৎসক ডা. শরিফা বিনতে আজিজের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ শোক জানানো হয়। এর আগে গত ৮ আগস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরেক চিকিৎসক ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু মারা যান।

অন্যদিকে, ক্যানসারের পর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মোরশেদা বেগম মারা গেছেন। শুক্রবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শুক্রবার দুপুরে ভিকারুননিসা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভিকারুননিসা বসুন্ধরা শাখার প্রভাতীর শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোরশেদা বেগম। সম্প্রতি তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথম কেমোথেরাপি নেওয়ার পর তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তার ডেঙ্গু টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট আসলে ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার প্লাটিলেট মাত্র এক হাজারে নেমে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

তিনি আরও জানান, তার রক্তের গ্রুপ ছিল ‘এ’ নেগেটিভ। আট ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল। তবে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় স্বজন ও সহকর্মীদের। রক্তের জোগাড় হলেও চিকিৎসক, স্বজন ও সহকর্মীদের শত চেষ্টা তাকে বাঁচাতে পারেনি। শুক্রবার সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোরশেদা বেগমের মৃত্যুতে ভিকারুননিসা পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী।

শোক বার্তায় তিনি বলেন, মোরশেদা বেগমের অকাল মৃত্যুতে ভিকারুননিসা পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ