গাড়িচালক যখন শত কোটি টাকার মালিক!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:১৯ : পূর্বাহ্ণ

জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কামাল আজাদের গাড়িচালক আবদুল মালেককে বিদেশি পিস্তলসহ (৬৩) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মালেককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাবের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আবদুল মালেক অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাঁর কর্মকাণ্ড। তাঁর ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ বামনের টেকের (বাসা নম্বর : ৪২) অভিযান পরিচালনা করে আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, দেড় লাখ টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

আবদুল মালেককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন গাড়িচালক। তিনি একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। মালেক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হতিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবদুল মালেকের স্ত্রীর নামে কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে, ধানমণ্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে। এ ছাড়া দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তাঁর বিপুল অর্থ গচ্ছিত আছে।

এসব ব্যাপারে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, আবদুল মালেক তাঁর অবৈধ সম্পদ রক্ষার জন্য বিদেশি পিস্তল ব্যবহার করেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন ছিলেন।

অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ভালো ব্যবহার করে এই ধরনের সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে র‍্যাব জানতে পেরেছে। আবদুল মালেকের ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ আছে। তাঁর নামে জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করার নাম করে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আনুকুল্য নিয়ে এত টাকার মালিক হয়েছেন বলে র‍্যাব জানতে পেরেছে।’

জানা গেছে, আবদুল মালেক তাঁর মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অফিস সহকারী পদে, ভাই আবদুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আবদুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার পদে, নিকট আত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দিয়েছেন।

মালেক নিজে গাড়িচালক হলেও মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো গ- ১৩-২৯৭৯) নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত পাজেরো গাড়ি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরো দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।

এরমধ্যে একটি পিকআপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-৭০০১) তিনি নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রি এবং মেয়ের জামাইয়ের পরিচালিত ক্যান্টিনের মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করতেন। অপর একটি মাইক্রোবাস (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো চ- ৫৩-৬৭৪১) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করতেন।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. সামছুল আলম গত বছরের ২২ অক্টোবর তাঁকে দুদকে তলব করেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দুদক এখনো অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি।

সকালের-সময়/এমএমএ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ