কোষ্ঠবদ্ধতা সম্পর্কে একটু বেশি আলোচনা প্রয়োজন কারণ কোষ্ঠবদ্ধতাই অধিকাংশ রোগের মূল কারণ।গ্রাম্য ছন্দে আমরা বলি,একবার হাগলে দুখী দুবার হাগলে সুখী আর ৩ বার হাগলে রুগী।কাজেই দৈনিক একবার পায়খানা হলেও সে সুখী নয়। অথচ এমন বহুমানুষ আছে যাদের ১ বার ও পায়খানা হয় না। কারো ২/৩ দিন অন্তর আবার কারো ৭/৮ দিন অন্তর পায়খানা হয়।তবুও তারা বেঁচে থাকে। ডা.হেরিং বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্যের ব্যক্তিরা দীর্ঘ জীবি হয়।যদি তারা এজন্য আত্মহত্যা না করে কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে কেবল শক্ত পায়খানাকে বুঝায় না।
নরম পায়খানা ও যদি বের হতে কষ্ট হয়, তাকেও কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য কোন রোগ নয় বরং এটি শরীরের ভেতরকার অন্য কোন মারাত্মক রোগের একটি লক্ষণ মাএ,যখন পেট পরিষ্কার হয় না বা অনিয়মিতভাবে হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠবদ্ধতা একটি খারাপ রোগ নিঃসন্দেহে। যে কোনো রোগই খারাপ। তবে কোষ্ঠবদ্ধতার কষ্ট মেনে নেওয়া কঠিন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু সচেতনতার অভাবেই এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এটাকে আমরা গ্রাহ্য করি না বলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই রোগটি যতক্ষণ না কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে ততক্ষণ আমাদের বোধোদয় হয় না। এ সুযোগে রোগটি শিকড় গেড়ে বসার কারণে আরও নানা রোগে ভোগার সূত্রপাত ঘটে থাকে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদের এ রোগে বেশি ভুগতে দেখা যায়।এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যেমন সুষম খাদ্যতালিকা (ডায়েট), রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস, বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ আঁশ জাতীয় খাবার এক শাক সবজি ও ফলমূল কম খেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ অজানা সুষম খাবার, আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়া, পানি কম পান করা, শর্করা বা আমিষ যুক্ত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া,ফাস্টফুড, মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, সময়মত খাবার না খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম কম করা, দুশ্চিন্তা করা, দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকা
কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণে বিভিন্ন রোগ সমস্যা: ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা টিউমার, থাইরয়েডের সমস্যা, অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার, কাঁপুনিজনিত রোগ, স্নায়ু রজ্জুতে আঘাত, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ: স্বাভাবিক এর চেয়ে কম সংখ্যকবার মলত্যাগ করা, ছোট, শুষ্ক, শক্ত পায়খানা হওয়া, মল ত্যাগে অত্যন্ত কষ্ট হওয়া, পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা, পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া, অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতার অনুভূতি না আসা, পেট ফুলে থাকা আঙুল, সাপোজিটরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে পায়খানা করা, মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া, মলদ্বারে চাপের অনুভূতি হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিছু পরামর্শ: মলত্যাগের বেগ হোক বা না হোক প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে বসবেন, এতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঐ সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে উঠবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করুন, কোন রোগের জন্য হয়ে থাকলে তার জন্য চিকিৎসা নিন, কোন ওষুধ সেবনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে মনে হলে সে ব্যাপারে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, সহজপাচ্য ও সাধারণ খাদ্যে অভ্যস্ত হোন, বেশি করে পানি পান করুন, প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার।
কিছু গ্রহণীয় খাবার: শাকসবজি, ফলমূল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ জাতীয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, সব ধরণের ডাল, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা
কিছু বর্জনীয় খাবার: গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, ময়দা, চা, কফি, সব ধরণের ভাজা খাবার যেমনঃ পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি
হোমিও সমাধান: রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয় তাই একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকে সঠিক ভাবে লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে কোষ্ঠবদ্ধ রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। আবার ইদানিং কিছু হোমিওচিকিৎসক বের হইছে নিজেদের কে ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি বলে ঐসব ডাক্তারদের রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে তখন দেখি অপ-হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেয় ঐ সব ডাক্তার বাবুরা পেটেন্ট টনিক দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা দিয়ে থাকে যে টাকে ডা.হানেমান বলে থাকে শংকর জাতের হোমিওপ্যাথি।তাই যিনি অর্গানন মেনে চিকিৎসা দেয় তার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা নিতে হবে।