ফের উত্তপ্ত মিয়ানমার সীমান্ত, থেমে থেমে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ


নিউজ ডেস্ক  ৩০ মার্চ, ২০২৪ ৮:০১ : অপরাহ্ণ

আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের এপারে রাখাইন থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এছাড়া নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমায় দেশটির নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজও টহল দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, শনিবার (৩০ মার্চ) ভোর থেকে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আধা ঘণ্টা পরপরই এপারে ভেসে আসছে। দুপুর পর্যন্ত এ শব্দ শোনা যাচ্ছে। যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন বাড়ি-ঘর কেঁপে উঠে।

এর আগের দুইদিনও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার পাশাপাশি মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ তাদের জলসীমায় টহল দিতে দেখা গেছে। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত থেকে এ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। তবে শনিবার সেটি আর দেখা যায়নি।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা খায়রুল আমিন বলেন, মিয়ানমারে বিস্ফোরণ হলে দ্বীপের এপারে শব্দ শোনা যায়। রাতের বেলায় শব্দ বেশি শোনা যায়, দিনের বেলায় কম। গত তিনদিন ধরে থেমে থেমে বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসছে। তিনি আরও বলেন, দ্বীপের অধিকাংশ জেলে সাগরে মাছ ধরতে যায়। তারা মাছ ধরতে গেলেও ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। যেহেতু রাখাইন রাজ্য যুদ্ধ চলমান।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আবারও পালিয়ে এসেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ সদস্য। এ বিষয়ে শনিবার (৩০ মার্চ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, শনিবার ভোরে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে এই ৩ সদস্য পালিয়ে আসে। পরে বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র জমা নেয়ার পর তাদের নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নে নিয়ে যায়।

যুদ্ধের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমার সেনাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজেপির ১৭৯ জন যারা পালিয়ে আসছে, তাদেরকে নৌপথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার ইতোমধ্যে প্রস্তাব করেছে। আমরা আশা করি খুব সহসাই এই তিনজনসহ তাদেরকে নৌপথে ফেরত পাঠাতে পারব।

এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে দেশটিতে ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।

অন্যদিকে দ্য ইরাবতীর খবরে জানা গেছে, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইন অঞ্চল দখল করতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাসে আরাকান আর্মি রাখাইনে হামলা চালিয়ে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল, বিজিপির ক্যাম্প, সীমান্ত চৌকি ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।

আরকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে রাখাইনের জেলা শহর আকিয়াব ও রাছিটং উপজেলা শহর মংডুর ও বলি বাজারের গ্রামে এখনো দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এসব উপজেলা শহরের মধ্যে মংডুর সেনা ক্যাম্প ও বলি বাজারের সেনা ক্যাম্প দখল করতে আরাকান আর্মি ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও জানা গেছে, অপরদিকে জান্তা বাহিনীও এসব সেনা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাল্টা আক্রমণ করছে। দেশটির জান্তা সেনারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া রাখাইন অঞ্চল, সীমান্ত চৌকি ও বিজিপির ক্যাম্প পুনরুদ্ধার করতে তাদের জলসীমানায় নাফ নদীতে গত দুইদিন ধরে যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে টহল দিচ্ছে। তবে এ জাহাজ থেকে কোনো হামলা এখনো করেনি জান্তার সেনারা।

টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সবসময় সর্তক রয়েছে।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ