সিলেট-সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। গ্রাম কী শহর-সবই পানিতে একাকার। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও পানি ঢুকে পড়েছে।
এমনকি কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি প্রবেশ করেছে। নানা জায়গায় সড়ক-সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ। রেললাইন ডুবে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে রেল যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
সিলেটে এমন এমন জায়গায় পানি উঠেছে, যেখানে গত ৬০ বছরেও কখনো পানি উঠেনি। দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। অনেকের ঘরে খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন।
ফলে সন্ধ্যা নামতেই গোটা অঞ্চলে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ। মোমবাতি আর জ্বালানি তেলের সংকটে অনেক বাসায় জ্বলেনি আলোও। এর মধ্যে টানা বৃষ্টি আর ক্ষণে ক্ষণে বজ্র পাত।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আর্তনাদ করছেন মানুষ। অনেকে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছেন। সবচেয়ে বিপদে আছে শিশু ও বয়স্করা। আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছেন সেনা, নৌবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এতে বিমানবাহিনীর ৪টি হেলিকপ্টার যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সব ছুটি বাতিল করে সদস্যদের মাঠে রাখা হয়েছে।
বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলার যোগাযোগ স্থাপনকারী সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে পুরো জেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়কগুলোও ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি উপজেলা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। ভেসে যাচ্ছে গবাদি পশু, পুকুরের মাছ। নষ্ট হচ্ছে মৌসুমি ফসল।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে, কিন্তু উদ্ধার করে নিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। এমতাবস্থায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীর বোট ও ডুবুরি দল যোগ দিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, সিলেট সেনানিবাসের প্রধান মেজর জেনারেল হামিদুল হক বলেন, আটটি উপজেলায় আমরা সেনা মোতায়েন করেছি। সেনা সদস্যরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্বাচন এবং উদ্ধারকৃতদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, খাদ্য গোডাউন, পাওয়ার স্টেশন এবং অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় কাজ করছে। এছাড়া সীমিত পরিসরে খাদ্য ও সুপেয় পানি সরবরাহে কাজ করছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এসব এলাকায় আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
সিলেট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭ হাজার ৯০০ বস্তা শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও ৮ হাজার প্যাকেট খাবার ও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের আরও অন্তত ১২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় বন্যায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসএস