লক্ষ্য অটুট আর মনে অধম্য ইচ্ছায় হাতবিহীন রাব্বী লিখছে মুখ দিয়ে


১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ৩:০৫ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: যদি লক্ষ্য থাকে অটুট আর মনে অধম্য ইচ্ছা তাহলে কোন বাধাঁয় দমিয়ে রাখতে পারে না কাউকে। এমনটাই প্রমাণ দিলো ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রাব্বি। দুই বছর আছে একটি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় দুই হাত চলে যায় রাব্বির। সে থেকে হাতের সব ধরণের কাজ সারছে মুখদিয়ে। এমনকি মুখের সাহায্যে লিখে এখন সে অংশ নিয়েছে প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায়।

জানা যায়, ২০১৬ সালে ৫ অক্টোবর স্কুল থেকে ফিরছিল রাব্বি। সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারী বাজারে মহাসড়কের উপর দেয়া ফুট ওভারব্রীজ দিয়ে যাওয়ার সময় ব্রীজের ওয়েল্ডিংয়ের বিদ্যুতের তার লেগে তার ২ হাত ঝলছে যায়। ডাক্তার তার ২ হাতই কেটে ফেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু সে দুহাত হারিয়েও তার পড়ালেখা থেমে থাকেনি। দুইবছর পিছিয়ে সে এবার ৫ম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেখা গেছে। রবিবার থেকে সারাদেশে শুরু হওয়া প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী টিএসসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মুখ দিয়ে পরীক্ষা দিতে দেখা গেল রাব্বিকে।

কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসের ইন্সেটেক্টর শেখ মাহবুবুর রহমান জানান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী রাব্বি ১০৩ নং কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছে। সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতই লিখতে পারছে। তাকে নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান এই কেন্দ্রে প্রায় ১১শ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে রাব্বিই একমাত্র বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী।

রাব্বি ছিল ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজী হুমায়ুন কবির জানিয়েছে রাব্বি মুখ দিয়েই ভাল লেখতে পারে যা অন্য শিক্ষার্থিদের মত। তিনি আশা করেন, সে এবার সমাপনী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান তাকে মুখ দিয়ে কিভাবে লিখতে হয় তার প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নুরুছফা জানান, এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উপজেলায় মোট ১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ৭৬৭৩জন, তার মধ্যে বালক ৩৭১০জন, বালিকা ৩৯৬৩ জন এবং ইবতেদায়ী শিক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ৭৭৯জন, তার মধ্যে বালক ৪৭৪ জন বালিকা ৩০৫ জন রয়েছে।

তিনি আরও জানায় গতকাল প্রথমদিন সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে পরীক্ষা সুসম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ আলাউদ্দিন জানান আমরা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর নজরে রাখছি। ভাটিয়ারীর রাব্বির প্রতি আমাদের দেখভাল ছিল তার ইচ্ছা ছিল বিধায় সে আজ সমাপনি পরীক্ষা দিয়েছে এবং ভাল ফলাফল করবে।

রাব্বির বাবা বজলুর রহমান ও মা রোজি আক্তার জানান, তার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাব্বিই বড়। আর পাঁচজন ছাত্রের মত রাব্বিও ছিলো একেবারে সুস্থ-স্বাভাবিক এবং মেধাবী একজন ছাত্র। স্কুল থেকে আসার পথেই বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হবার পর অন্য এক কলেজ ছাত্রসহ এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করালে ১ মাস ১৯ দিনের চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে যায় সে। কিন্তু চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলে তাঁর দুই হাত। বাবা বজলুর রহমান আরো বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দিনমুজুরী করে সংসার চালাই। ওই দুর্ঘটনায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়। বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় সেটা আমরা করেছি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমাদের।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page