ঠাকুরগাঁওয়ে “নিপাহ ভাইরাসে” একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু


৪ মার্চ, ২০১৯ ১:৩২ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: কোনো অজানা রোগে নয়, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন বাদুড়বাহিত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রোববার (৩ মার্চ) আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদমাধ্যমে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত ডিজিজ সার্ভেল্যান্সে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। রোগের কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে পাঁচ সদস্যের একটি টিম পাঠায়। পরবর্তীতে আরও চার সদস্যের আরেকটি টিম তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তদন্ত কাজ পরিচালনা করে টিম দু’টি। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবার, প্রতিবেশী, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ করেন টিমের সদস্যরা। রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি এবং তাদের স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা আইইডিসিআর পর্যবেক্ষণে রেখেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাদুড়ের খাওয়া খেজুরের রসের মাধ্যমে ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে। আইইডিসিআরের তদন্ত দল প্রথম মৃত ব্যক্তির খেজুরের কাঁচারস পানের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও পরে আরও যে চারজন মারা যান, তারা প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ধারণা করছে।

সেজন্য আইইডিসিআর সবাইকে খেজুরের কাঁচারস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের নিপাহ্ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (মাস্ক ও গ্লাভস) নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে। তাদের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ রকম রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সম্পূর্ণ পৃথক স্থানে রেখে পৃথকভাবে সেবা দিতে হবে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর ভান্ডারদহ নয়াবাড়ী গ্রামের তাহের আলী (৫০) মারা যান। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাহের আলীর মেয়ের জামাই হাবিবুর রহমান ( ৩২), ২১ ফেব্রুয়ারি তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫), ২৪ ফেব্রুয়ারি তাহেরের বড় ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) মারা যান। স্থানীয়রা প্রথমে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অজ্ঞাত রোগ বলে ধারণা করছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page