বিষয় :

রোজায় খোলা স্কুল-কলেজ, কেউ খুশি–কেউ নারাজ


নিউজ ডেস্ক  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ৫:৪২ : অপরাহ্ণ

২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি আংশিক সংশোধন করেছে মন্ত্রণালয়। এতে রমজানের শুরুতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাকার্যম খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই পথে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। তারাও রমজানের শুরুতে খোলা রাখবে বিদ্যালয়। হঠাৎ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে ‘নারাজ’ শিক্ষকরা।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রমজানের প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে। আর ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হবে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম চালু থাকবে ১০ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত।

প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটিসহ ২০২৪ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছুটির তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র-শনি) ছাড়া মাধ্যমিকে ৭৬ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৭১ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১০ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রমজান ও ঈদের টানা ছুটি ছিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেই ছুটির তালিকা আংশিক সংশোধন করে রমজানের ১৫ দিন শিক্ষা প্রাতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৬ দিনের ছুটির তালিক প্রকাশ করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১১ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল রমজান ও ঈদের ছুটি। সেই ছুটি সংশোধন করে রমজানের প্রথম ১০ দিন পাঠদান চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে ছুটি সংশোধনের তথ্য জানিয়েছে। শিখন ঘাটতি পূরণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে অনেক এলাকায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এতে শিখন ঘাটতি হয়েছে। নতুন কারিকুলামে হাতে-কলমে শিক্ষায় জোর দেওয়ায় শিখন ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য রমজানে ছুটি কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে ছুটি বাতিল করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ এটিকে ‘ইতিবাচক’ বলছেন। আবার অনেক অভিভাবক রোজার মধ্যে ‘ছুটি থাকলেই ভালো হতো’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

রেজাউল হক নামের এক অভিভাবক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, রোজার মধ্যে সব অফিস খোলা থাকে। স্কুল বন্ধ রাখার প্রয়োজন দেখি না। রোজা রেখে সব কাজ করতে পারাটাই প্রকৃত সিয়াম সাধনা। আমার মেয়েটা দুই বছর ধরে রোজা রাখে। আমি ওকে রোজা রেখে ক্লাস করতেই উৎসাহিত করি।

চট্টগ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেলী আকতার বলেন, রমজানের বিদ্যালয় খোলা রাখাটা শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি সিদ্ধান্ত। এ সময় শিক্ষার্থীরাই ক্লাসে থাকে না। শুধু শুধু হাজিরা দিতে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ক্লাস নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়টি আনন্দময় হওয়া উচিত। এটা জোর করে চাপিয়ে দিয়ে আদায় করা সম্ভব নয়। আমরা রোজা রেখে ক্লাসে যাবো, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবো।

কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী ধর্মীয় কারণে ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখার চেষ্টা করে। অনেকে হাফ বেলা রোজা রেখে হয়তো আর পারে না। এমন অবস্থায় তারা স্কুলে আসতে চায় না। স্কুলে উপস্থিতি খুবই কম থাকে। ওই সময় যা শেখানো হবে, তা থেকে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে।

মন্ত্রণালয় সার্বিক দিক বিবেচনা করেই স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করার চেয়ে ক্লাসে শিক্ষকদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকাটা বেশি। সেদিকেও তাদের নজর রাখতে হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১১ বা ১২ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। ছুটির তালিকা অনুযায়ী, পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, জাতীয় শিশু দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডেসহ বেশ কয়েকটি সরকারি ছুটির সমন্বয়ে টানা ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ