সরগরম অজপাড়ার ” টং” চায়ের চুমুকে নৌকা ও ধানের শীষ


২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ৭:৩২ : অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ ফোরকান চট্টগ্রাম:: আর মাত্র তিনদিন বাকী সংসদ নির্বাচনের এনিয়ে চলছে নানা তর্ক বিতর্ক। সকল প্রতীক নিয়ে আলোচনা থাকলেও সবচেয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে। কথায় কথায় বের হয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো ও নেতাদের কর্ম-অপকর্ম সমূহ। নৌকা কত আসন পাবে? ধানের শীষ কত আসন পাবে? অন্য প্রতীকগুলোর ভাগ্য কী হবে ইত্যাদি।

চট্টগ্রাম শহরটাই যেন মিশ্র মানুষের বসবাস। প্রবাসী, চাকুরে, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক সকল পেশার মানুষ রয়েছে এই শহরে। একটি চায়ের দোকানে দেয়ালে স্টিাকারে লিখা আছে, রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। তবে কার নিষেধ কে শুনে? তরুণ, মধ্যবয়সী আর বৃদ্ধা সবাই নিজের দেখা রাজনীতির চিত্র অঙ্কন করছেন কথার মাধ্যমে।

মো. রফিক চায়ের চুমুকে বলেন, দেশের উন্নতি হইছে, বহু উন্নতি হইছে। এই যে চট্টগ্রাম শহর ঘুরে এলাম দেখলাম সুন্দর রাস্তা ঘাট, ফ্লাইওভার সব তো আওয়ামী লীগ করছে। আগে যে চাকুরিজীবীর বেতন ছিল ১০ হাজার এখন বেতন হইছে ৩০ হাজার। মোহাম্মদ রফিকে থামিয়ে দিয়ে হিরু বলেন, হাক্কু তুমি সরকারি চাকরি করোনি? আমি সরকারি চাকরি করিনি? শতে ৫জন মানুষ তো সরকারি চাকরি করে না, তাদের কথা বলে লাভ কী?

তবে দু’জনের কথা শেষ না হতেই তৃতীয় ব্যক্তি বলে উঠল, আওয়ামী লীগ জিতুক আর বিএনপি জিতুক আমি সিএনজি ড্রাইভার সিএনজির ড্রাইভারই থাইককুম, আর অনে এল্ললেই থাইবেন। গাড়ি চালাই ১৭ বছর, যে দলই ক্ষমতায় আসুক সে দলের নেতারাই আমাদের থেকে চাঁদাবাজি করে। নেতারা যে ২৪ ঘন্টা রাজনীতি করে তাদের পরিবার চালায় কীভাবে? এই চাঁদার টাকা দিয়া।

এভাবেই চলছে তর্ক-বিতর্ক। তারা রাজনীতিক না হয়েও তাদের কথার ধারাবাহিকতা আর যুক্তি দেখে মনে হয়, চায়ের দোকান নয়, মনে হয় মিনি পার্লামেন্ট। রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ এমন স্টিকার কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানি মোহাম্মদ আলী জানান, কিছুদিন আগে রাজনীতির আলাপে দুই পক্ষ মারামারি লেগে যায়, দোকানের জগ, বসার টেবিলসহ আসবাবপত্র ভেঙ্গেছে। তাই এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ করে দিয়েছি।

স্টিাকার লাগানের পর আলাপ বন্ধ হয়েছে কিনা? এ প্রশ্নে হাসি দিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, বন্ধ হয়নি বরং আরো বেড়েছে। এটা বন্ধ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। আগে চা বিক্রি হতো ২শ কাপ, এখন বিক্রি হয় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ কাপ। এ চিত্র শুধু এ এলাকার নয় গ্রামের সর্বত্র বিভিন্ন ছোট ছোট চা দোকান গুলোতেও একই অবস্থা। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলা, আনোয়ারা উপজেলা, বোয়ালখালী উপজেলা। এই উপজেলাগুলোতে হরদম চলছে রাজনৈতিক আলাপ ছাড়িতা। গ্রামের বেশী সংখ্যাক মানুষ কৃষক আর অল্প কিছু মানুষ প্রবাসীসহ অন্য পেশায় আছে।

অজপাড়ার এ টং দোকানগুলোতে রাজনীতির আলাপ বেশ সরগরম। রাজনীতির কথার শুরুতে মো. আজিজ বলেন, যে বাজার ঠিক রাখতে পারবে, আমরা সে সরকারকে ভোট দেবো। মাছের দাম, তরকারির দামের দিক দিয়ে বর্তমান সরকার ভাল করেছে। তবে মুরাদ নামে অন্য এক কৃষক বলছিলেন, ঠিক হইলো কই? বিএনপির আমলে নুন কিনছি ১০ টাকা কেজি, এখন কিনি ৩৮ টাকা। আগে তেলের দর ছিল ৩৫-৪০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। আমরার আয়তো সে হারে বাড়ে নাই, আগে দিন মজুরি করছি ১৮০/২০০ টাকা, এখন পাই ৪০০ টাকা সব কিছুর দাম বাড়ছে।

চট্টগ্রাম আদালত পাড়ার একটি টি-স্টলে পারস্পরিক কথা বলছিলেন এড. সাইফুুুুউদ্দীন ও এড.মাসুদুুল হক নামে দু’জন আইনজীবী। তাদের মধ্যে কথোপকথনে তারা বলেন, যারা শহরে থাকে বা একটু উচ্চ পরিবারের তারা ভোট কেন্দ্রে যায় না। সময় নষ্ট, গাড়ি ভাড়া, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা এগুলোর কারণে। তবে তার কথায় একমত নয়, অন্য আইনজীবী। ভোট দেওয়া আমার অধিকার। কষ্ট করে হলেও যে ভোট দেওয়ার সে ভোট দেবে। এভাবেই বর্তমানে শহর ও গ্রামে ছোট খাট চায়ের দোকানগুলো হয়ে উঠছে সরগরম।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page