বিষয় :

যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাচ্ছি: ড. কামাল


১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ৪:৪৪ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে যদি কোনও আঘাত করা হয়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে ‘৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০১৮’ ও বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান ও অনুরোধ জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের আর যে ১০ দিন আছে, এই সময়ে দেশের মানুষ ও স্বাধীনতার জন্য নির্বাচন কমিশন ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করুন, নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগান। সরকার যদি পরিপন্থী কিছু করে, তবে তা থেকে বিরত রাখার, আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আপনাদের (ইসি) আছে। পুলিশকে সরান। পুলিশ যেভাবে ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে, এটা থেকে মানুষকে রক্ষা করা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এগুলো আপনাদের (ইসি) অবশ্যই জানা আছে। তবুও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের (ইসি) ক্ষমতাগুলো কাজে লাগান।

ড. কামাল বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাচ্ছি। আর তা না করে যদি নির্বাচনকে আঘাত দেওয়া হয় ভয়াবহ পরিণতি হবে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, অবিলম্বে পুলিশকে তাদের পরিপন্থী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলুন। ইসিকে বলছি, পুলিশকে কি আপনারা রাস্তায় রাস্তায় আক্রমণ করতে, বাধা দিতে দায়িত্ব দিয়েছেন? রাস্তায় রাস্তায় কেন এত পুলিশ, কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এমন অবস্থায় চলে গেছে যে, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে? এটাকে যদি কেউ সুশাসন বলে, তবে আমি বলবো সে মিথ্যা বলছে। এর মধ্যে সুশাসন আছে যে বলবে, আমি বলবো সে মিথ্যুক।

উচিৎ কথা বলছি। পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলবো। পারলে ধরে নিয়ে যান আমাকে। সরকারের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সংবিধান পেয়েছি। এটা ভুলে গেলে চলবে না। তথাকথিত নির্বাচনে যদি আপনারা ৩০০ সিট চান তাহলে বলেন, আমরা দিয়ে দেই। আপনারা চান আমরা দিয়ে দেই। সবাই হাত তুলে সম্মতি জানিয়ে দিয়ে দেই। আপনারা তো ইতোমধ্যে বলেছেন অসম্পন্ন কাজ করতে আরও পাঁচ বছর (ক্ষমতায়) থাকতে চান। ওই পাঁচ বছর পর অসম্পন্ন কাজ থাকলে বলেন প্রয়োজনে আরও পাঁচ বছর সময় আপনাদের দেওয়া হবে। এটা নির্বাচনের নামে প্রহসন।

তিনি বলেন, আজকে যে মানবাধিকারের কথা আমরা বলছি, সংবিধানে সে কথা স্পষ্ট করে বলা আছে যে, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারবে না, পুলিশের এই ভূমিকা থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধানে মানবাধিকার, আইনের শাসনের কথা যেভাবে বলা আছে, সেগুলো লঙ্ঘন করলে তাদের অসম্মান করা হয়, স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হয়। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। এ অবস্থায় আইনের শাসন, মানবাধিকার, ঐক্য সংগঠিত করে, ভোটাধিকার যেন সবাই প্রয়োগ করতে পারি, সেসব নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমি যেটা দেখছি, ভোটাধিকার নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। ভোটাধিকার মানুষ প্রয়োগ করুক, স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন কাজ করুক, সাধারণ মানুষ নিজের ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে প্রয়োগ এসব সংবিধানের কথা, স্বাধীনতার কথা।

স্বাধীন দেশে মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে ব্যর্থ হয়, তবেই এটা স্বাধীনতার ওপরে আঘাত। এই আঘাত দেওয়া উচিৎ না। কেননা, এই আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পেয়ে যাবে, তবে তাদের বলছি, পুলিশের অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। ফেডারেশনের সভাপতি ড. মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন— সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ। এর আগে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page