একুশের বেদীতে কাকও নাচে, ময়ূরও নাচে–কাদের


নিউজ ডেস্ক  ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ৫:২২ : অপরাহ্ণ

বিএনপি দেশের রাজনীতির জন্য বিষফোঁড়া বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বারবার শহীদ মিনারকে অপমান ও রক্তাত্ত করেছে বিএনপি।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বক্তব্যকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপিকে ‘কাক’ আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদেরকে সেই কাক চিনতে বলেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চিনতে হবে। একুশের বেদীতে কাকও নাচে, ময়ূরও নাচে। কাক আছে ময়ূর আছে। কাক কোকিলের তফাৎ বের করতে হবে। এই কাকের কর্কশ কণ্ঠস্বর, কাক চিহ্নিত করতে হবে এবং এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, শক্তিতে বলিয়ান হয়ে।

তিনি বলেন, সেই প্রতিরোধ সংগ্রামে আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সবাইকে আহবান জানাচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসুন। আমরা আমাদের স্বাধীনতার, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের একুশের চেতনার শত্রু বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই অপশক্তিকে রুখতে হবে। শপথ নিতে হবে। আজ তৈরি হয়ে যান, এই অপশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, বৃষবিক্ষ যারা এদেশে সৃষ্টি করেছে, এই অপশক্তি এরা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এরা আগুন সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক। এদের হাতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয়।

এদের হাতে একুশের চেতনা নিরাপদ নয়, এদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিরাপদ নয়, এদের হাতে স্বাধীনতার আদর্শ কোনদিনও নিরাপদ নয়, এদের হাতে নিরীহ মানুষের জীবন নিরাপদ নয়, এদের হাতে ভদ্র মহিলাদের সম্মান নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশেরই অপশক্তি একটা বিষবৃক্ষ, এটা বিষফোড়া। এই বিষফোঁড়াকে বাংলার মাটিতে এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এদেরকে পরাজিত করতে হবে। একুশের চেতনা এই অপশক্তির বিরুদ্ধে।

বিএনপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা দলবাজি করি! গতকাল প্রভাত ফেরী করে শহীদ মিনারে গেলাম। একটা মিনিট সময় আমাদের লাগেনি। আমরা ৩ ঘণ্টায় পৌঁছাই। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে দিতে একটা মিনিটও আমরা দাঁড়াইনি।

তিনি বলেন, আমাদের লোকজন, আমাদের নেতাকর্মীরা, কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন, ঢাকা সিটির নেতাকর্মীরা ছিলেন, সহযোগী সংগঠন ছিল এবং আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গতকাল প্রভাতফেরিতে যোগ দিয়েছিলেন। কোথায় দলবাজি করলাম? দলবাজিটা করলাম? কিভাবে করলাম?

কাদের বলেন, বিএনপির কি মনে নেই এই শহীদ বেদীতে ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বেদীতে উঠেছিল ফুল দেওয়ার জন্য। শহীদ মিনারকে কারা অপমান করেছে? এই শহীদ মিনারে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখানে বসে আছেন। খুর দিয়ে ১৪ ইঞ্চি কাটা হয়েছিল। বিশাল গর্ত, রক্তে রক্তে ভিজে গেছে শহীদ মিনার। কারা করেছে? এই মায়া ভাই বেঁচে আছেন কি মরে গেছেন সন্দেহ ছিল। তাকে এমন ভাবে খুর দিয়ে আঘাত করা হয়েছে ১৪ ইঞ্চি কেটে গিয়েছিল। আমাদের মনে আছে। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। কারা করেছিল? গোলাগুলির মধ্যে যুবলীগকর্মী নিহত শহীদ মিনারে, কারা করেছে?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে আগুন সন্ত্রাস, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। তারাই করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, নেত্রী আপনার মনে আছে মাগরিবের আজান চলছে, শহীদ দিবসের কর্মসূচি, তিনদিনের কর্মসূচি, পার্টি অফিসের বারান্দায় আমাদের মাইক নিয়ে গেছে পুলিশ, মঞ্চ ভেঙে ফেলেছে।

তারপর নেত্রী খবর পান। অফিসে ঢুকে লাইট বন্ধ করে আমাদের কর্মীদের উপর নির্যাতন, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন। তখন নেত্রী এই অন্ধকারের মধ্যেই এসে পার্টি অফিসে ছুটে এলেন এই কর্মীদেরকে রক্ষা করার জন্য। সেদিনের সে স্মৃতি আজও মনে পড়ে। তিন দিন আমরা স্মরণ সভা, একদিন আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। এই হচ্ছে বিএনপি।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, দলবাজি তো আপনারা করেছেন শহীদ মিনারে।জাতীয়তাবাদী দল আপনারা গিয়েছেন ফুল ছিটিয়ে সেদিন লণ্ডভণ্ড করেছেন। মনে নেই?

তিনি বলেন, সাভার স্মৃতিসৌধে বেগম জিয়া ক্ষমতায়, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিতে গিয়েছিলেন কি দৃশ্যপট! আমাদের নেতাকর্মী ছিল, কি অত্যাচার! সিভিল ড্রেসে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল আমাদের- আমাদের নেতাকর্মীদেরকে। কোনো রকমের ফুল দিয়ে নেত্রীকে ফিরতে হয়েছিল।

বিএনপির শাসনামলে চিত্র তুলে ধরে কাদের বলেন, যারা অত্যাচার করেছে গৌরনদীতে, বাধা দিয়েছে। ঈশ্বরদীতে গোলাগুলি করেছে। কলারোয়ায় গোলাগুলি করেছে। শেখ হাসিনা যেখানে গেছেন সেখানেই বাধা। শহীদ মিনারে বাধা। সবাই জানে। ভিডিও ফুটেজ আছে।

কাদের বলেন, আজ তারা দলবাজির কথা বলেন! দলবাজি করেছে তারা। তারা ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চায়। মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে শেখ হাসিনার জন্য। আমরা মাতৃভাষার মর্যাদা নষ্ট করেছি? মাতৃভাষাকে অপমান করেছেন আপনারা। শহীদ মিনারকে রক্তাক্ত করেছেন আপনারা। আপনারা একুশের চেতনা বিরোধী, আপনারা একাত্তরের চেতনা বিরোধী, যারা একুশের চেতনা মানে না, তারা একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাস করে না।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৫৩ সালে অনেকগুলো মাইলফলক ৬২, ৬৬’র ছয় দফার আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন আইয়ুব খানের, তারপরে ঊনসত্তরের ছাত্র জনতার আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ যে পাটাতনের উপর আমাদের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পাটাতন নির্মিত হয়েছিল ৫২ সালে এবং সেই স্বাধীনতা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তিনি বাঙালি জাতির স্বতঃস্ফূর্ত জাতিসত্তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের সূচনা। সেখানেই পূর্ণতা পায় আমাদের স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র আছে। বঙ্গবন্ধুর নাম অনেকে মুছে ফেলতে চায়। এই ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু ৪৮ সালে। তার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন। বারে বারে জেলে গেছেন। কি জন্য গেছেন? ভাষা আন্দোলনের জন্য।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page